ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাবার পরিবর্তন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ডায়াবেটিস হলো একটি স্থায়ী রোগ ।
যা খুবই সামান্য মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত থাকলেও মানসিক এবং শারীরিক সমস্যার কারণে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।
একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাবারের নিয়মিত সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
কারণ ডায়াবেটিস কারণে তার শরীরে গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা অনুসরণ করলে তাদের স্বাস্থ্য আগের চেয়ে ভাল থাকবে।
ডায়াবেটিস কী । দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যের গুরুত্ব
যখন শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কোন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলি।
খালি পেটে যদি গ্লুকোজের মাত্রা যদি ৭-এর বেশি থাকে। আর খাবারের পর যদি ১১-এর বেশি থাকে, তখন সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে।
এই রোগে কার্যকরী কিছু স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবর্তন করার মাধ্যমে আপনার শরীরকে আগের চেয়ে অনেক সুস্থ রাখতে পারবেন ।
সঠিক খাদ্যপ্রণালী অনুসরণ করে ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের রক্ত শর্করার নির্মাণও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং তাদের অসুস্থতা সম্ভাবনাও কমাতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যের গুরুত্ব
নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলো:
১. স্থিতিশীল কার্বোহাইড্রেট
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্বোহাইড্রেট সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শর্করা, চিনি, মিষ্টি এবং পানির সঙ্গে মিশিয়ে থাকা খাবারগুলি রক্তে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে থাকে এবং রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
অধিক জটিল কার্বোহাইড্রেট খাবারের মধ্যে রয়েছে ধান, গম, মাখন আদা। এই ধরনের খাবারগুলি স্লোলি রক্তে শর্করা উৎপন্ন করে।
২. ফাইবার
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল, সবজি, প্রোটিন সম্পন্ন খাদ্য ও পূর্ণ গ্রেইন মসুরি, ছোলার মতো পূর্ণ আনাজগুলি অত্যন্ত উপকারী ফাইবারের উৎস।
ফাইবার রক্ত শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে কমিয়ে আনে।
৩. প্রোটিন
প্রোটিন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদক। মাংস, মাছ, ডাল, লেন্টিলস, ছোলা, অধিক জটিল প্রোটিনের উৎস হতে পারে ।
ডেয়ারি প্রোডাক্টস যেমন দুধ, চিজ, কোয়ার্ক, সোয়াবিন ইত্যাদি । এই খাবারগুলি প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ভাল উৎস হিসাবে কাজ করে এবং তাদের রক্ত শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রশ্রয়তা বৃদ্ধি করে।
৪. অলিয়ান্ট ফ্যাট
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
আপোষ্টলে পাওয়া যায় যে, সবজি তেল, অলিভ অয়েল, মেথি বীজ, আখরোট ও বাদামের মতো উচ্চ মাত্রার মনোনিত ফ্যাট মধ্যে রয়েছে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি অন্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হতে পারে যেমন:
- অতিরিক্ত পিপাসা ।
- অতিরিক্ত খাদ্যপ্রবণতা ।
- অতিরিক্ত মুখ শুষ্কতা ।
- প্রস্রাবের সমস্যা ।
- মাথাব্যথা ।
- মাথার অস্থিরতা ।
- অস্বাভাবিক ওজন কমা বা বেড়ে যাওয়া ।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
নীচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা দেয়া হলো :
১. চিনি
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি খাবারের মধ্যে অত্যন্ত বিষক্রিয়াশীল উপাদান যা গ্লুকোজের স্তরকে উচ্চমাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
২. মিষ্টি
মিষ্টি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। মিষ্টিতে অনেক মাত্রায় চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে যা গ্লুকোজের স্তরকে উচ্চ করে তুলতে পারে।
৩. মিষ্টান্ন
পানির সাথে মিশিয়ে পাকা কালার ধান, চিনি এবং গাওয়া দুধ থাকা মিষ্টান্ন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুপযোগী।
৪. মিষ্টি পানি
মিষ্টি পানির মধ্যে চিনি ও মিষ্টি সংযুক্ত থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজের স্তরকে উচ্চ করে তুলতে পারে। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি পানি নিষিদ্ধ।
৫. মিষ্টি দই
দই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো নয়, কারণ এটি চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে যা গ্লুকোজের স্তরকে উচ্চ করে তুলতে পারে।
৬. সুগার-সংযুক্ত মিষ্টি ও বিস্কুট
যে কোনো মিষ্টি বা বিস্কুটে সাধারণত অধিক পরিমাণে চিনি বা সুগার সংযুক্ত থাকে, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
৭. সুপারিশি সস
সুপারিশি সসে চিনি বা মিষ্টি সংযুক্ত থাকে এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকতে পারে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নিষিদ্ধ।
৮. সফট ড্রিঙ্কস
সফট ড্রিঙ্কসে অনেক পরিমাণে চিনি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের স্তরকে উচ্চ করে তুলতে পারে।
সোডা, কোলা, ফেণসি, এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদি সফট ড্রিঙ্কসগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ
৯. বাংলাদেশি সস
বাংলাদেশি সসে সাধারণত অনেক পরিমাণে চিনি বা মিষ্টি ব্যবহার করা হয়, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিষিদ্ধ।
১০. আলুর চিপস এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস
আলুর চিপস এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসে সাধারণত অনেক পরিমাণে তেল ও নতুন কার্বোহাইড্রেট সংযুক্ত থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুপযোগী।
১১. প্যাকেট স্ন্যাকস
প্যাকেট স্ন্যাকস সাধারণত বেশি কার্বোহাইড্রেট, চিনি এবং কোলেস্টেরল সংযুক্ত থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
১৪. সুইটস, জেলি, জাম ইত্যাদি: সুইটস, জেলি, জামে সাধারণত বেশি পরিমাণে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এগুলো নিষিদ্ধ।
১২. মিষ্টি কনফেকশনারি
মিষ্টি কনফেকশনারি বিষয়ে সাধারণত চিনি এবং মিষ্টি সংযুক্ত থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
১৩. বিলটজ
বিলটজ একটি প্যাকেটেড জুস যা সাধারণত অনেক পরিমাণে চিনি বা স্যাকারিন সংযুক্ত থাকে, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
১৪. স্যান্ডউইচ বিস্কিট
স্যান্ডউইচ বিস্কিটে সাধারণত মাখন, চিনি, এবং মিষ্টি সংযুক্ত থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
১৫. বিলা কর্ন ফ্লেক্স
বিলা কর্ন ফ্লেক্স একটি গ্রেভি সংযুক্ত অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত কর্ন ফ্লেক্স, যা বাড়তি চিনি ও কার্বোহাইড্রেট সংযুক্ত থাকতে পারে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
১৬. হাই-ফ্রাক্টোজ কর্ন সিরাপ
হাই-ফ্রাক্টোজ কর্ন সিরাপ অনেক প্রকার প্যাকেটেড খাবার এবং পানীয় উপাদানে ব্যবহৃত হয়, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
১৭. ইন্সট্যান্ট নুডলস
ইন্সট্যান্ট নুডলস সাধারণত বেশি কার্বোহাইড্রেট, স্যাটারেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সংযুক্ত থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুপযোগী।
১৮. ফ্রেশ জুস
ফ্রেশ জুসে অনেক পরিমাণে চিনি থাকে এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ উচ্চ থাকতে পারে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
১৯. প্যাকেট মিক্সড সিরিয়াল
প্যাকেট মিক্সড সিরিয়ালে সাধারণত বেশি চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগী
২০. ক্যান্ডি ও চকলেট
ক্যান্ডি ও চকলেটে বেশি পরিমাণে চিনি ও আনহেল্থি চর্বি থাকতে পারে, তাই এগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
২১. মার্গারিন
মার্গারিন একটি ট্রান্স ফ্যাট ধরণের তেল, যা কর্ন অল ও ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ থাকতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সম্পূর্ণরূপে মার্গারিন নিষিদ্ধ।
২২. কেক, পাস্ত্রি এবং বিস্কুট
কেক, এবং বিস্কুটে চিনি, স্যাটারেটেড ফ্যাট ও হাই-কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
২৩. কুকিজ এবং বিস্কিট
কুকিজ এবং বিস্কিটে সাধারণত অনেক পরিমাণে চিনি, আনহেল্থি চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ।
একনজরে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
উঃ চিনিযুক্ত এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার
- উচ্চ চিনিযুক্ত পানীয় (সোডা, ফলের রস, শক্তি পানীয়)
- ক্যান্ডি, চকোলেট এবং মিষ্টান্ন যোগ করা শর্করার সাথে
- মিষ্টি সিরিয়াল এবং স্বাদযুক্ত দই
- পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট
- সাদা রুটি, পাস্তা এবং ভাত
- প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, ক্র্যাকার)
- চিনিযুক্ত প্রাতঃরাশের সিরিয়াল
গ. উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার
- ভাজা খাবার (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ভাজা মুরগি)
- পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য (পুরো দুধ, পনির, মাখন)
- চর্বিযুক্ত মাংস (প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেকন)
- উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার
- আলু এবং আলু পণ্য
- তরমুজ এবং অন্যান্য উচ্চ-চিনিযুক্ত ফল
- কিছু স্টার্চি সবজি (ভুট্টা, মটর)
- প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত খাবার
- ফাস্ট ফুড খাবার
- হিমায়িত ডিনার এবং প্রাক-প্যাকেজ করা খাবার
- প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, হট ডগ)
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সর্বশেষ
এ বিষয়ে আসলে আরো ডিটেইলস জানতে চাইলে আপনার চিকিৎসক জানিয়েছেন তার সাথে পরামর্শ করা যায় । ডায়াবেটিস চিকিৎসা কেন্দ্র যেগুলো আছে সেগুলাতে লিফলেট থাকে এবং সেখানে শিখানো হয়।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা পরবর্তীতে নতুন টপিক আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।