বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের কল্যাণে জীবিকা উপার্জনের পথ হয়ে উঠেছে আরও সহজ এবং বৈচিত্র্যময়। আজকে আমরা এমনই একজন তরুণের গল্প শোনাবো, যিনি একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে অনলাইন আয়ের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন নিজের সফল ক্যারিয়ার। এই গল্প শুধু অনুপ্রেরণামূলক নয়, এটি দেখিয়ে দেয় ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় আর সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে কিভাবে কেউ নিজের ভাগ্য বদলাতে পারে।
শুরুর গল্প: এক গ্রামের ছেলেকে নিয়ে
মো. সাইফুল ইসলাম, একজন তরুণ যার জন্ম বরিশালের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তাঁর পরিবার ছিল সাধারণ, অভাবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ। কলেজ জীবনেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন কিছু একটা করতে হবে যেন নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারেন। ইন্টারনেট ছিল তখনো বিলাসিতা, কিন্তু গ্রামের এক দোকানে ১৫ টাকা ঘণ্টায় ব্রাউজ করার সুযোগ ছিল। সেখান থেকেই তাঁর অনলাইন যাত্রা শুরু।
ইউটিউব থেকে শেখা
প্রথমদিকে ইউটিউবেই শেখা শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ও গ্রাফিক ডিজাইন। তিনি বলেন, “আমি প্রথমে জানতামই না ফাইভার, আপওয়ার্ক এগুলো কী। কিন্তু ধীরে ধীরে ভিডিও দেখে নিজেই শিখতে লাগলাম। রাত জেগে কাজ করতাম, একসময় নিজের একটা ছোট স্কিল সেট দাঁড় করাই।”
প্রথম আয়
প্রায় ছয় মাস পর ফাইভার থেকে প্রথম অর্ডার পান – ৫ ডলারের একটি লোগো ডিজাইন। এটাই ছিল তাঁর অনলাইন আয়ের প্রথম সাফল্যের ধাপ। প্রথম ইনকাম পেয়ে তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
ধীরে ধীরে উন্নতি
প্রথম অর্ডারের পর তিনি নিজের প্রোফাইল আরও উন্নত করতে থাকেন। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন – ফাইভার, আপওয়ার্ক, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি। তাঁর দক্ষতা বাড়তে থাকে এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কমিউনিকেশন দক্ষতাও উন্নত হয়। সাইফুল এখন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার, যিনি প্রতি মাসে গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
অনলাইন ব্যবসার প্রসার
শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয়, সাইফুল এখন একটি অনলাইন এজেন্সিও চালান, যেখানে আরও ৫ জন তরুণ কাজ করছেন। তিনি তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং সবাই মিলে আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের ডিজাইন, মার্কেটিং ও কন্টেন্ট রাইটিং সার্ভিস দিচ্ছেন।
পারিবারিক পরিবর্তন
একসময় যে পরিবারে তিন বেলা খাবার নিশ্চিত ছিল না, এখন সেই পরিবারে সুখ, স্বস্তি আর সম্মান। বাবা-মা গর্ব করে বলেন, “আমার ছেলে এখন অনলাইনে বিদেশের লোকজনের কাজ করে, আমাদের আর অভাব নেই।”
অনুপ্রেরণা অন্যদের জন্য
সাইফুল বলেন, “অনেকেই ভাবে অনলাইনে আয় করা শুধু শহরের বা উচ্চশিক্ষিতদের জন্য। কিন্তু আমি নিজে প্রমাণ করেছি – ইচ্ছা থাকলে, ইন্টারনেট আর সময় থাকলেই কেউ এগিয়ে যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এখন চেষ্টা করি অন্যদেরও শেখাতে। প্রতি সপ্তাহে একটি ফ্রি ক্লাস নেই, যাতে গ্রামের তরুণরা নতুন কিছু শিখতে পারে।”
কীভাবে আপনিও শুরু করতে পারেন?
সাইফুলের মতে, অনলাইন আয়ে সফল হতে চাইলে কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি:
-
নির্দিষ্ট একটি স্কিল শেখা – যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদি।
-
ইংরেজি শেখা – যেহেতু ক্লায়েন্টদের অধিকাংশই বিদেশি, তাই ইংরেজিতে যোগাযোগ করার সক্ষমতা থাকা দরকার।
-
অধ্যবসায় – শুরুতে ইনকাম না হলেও ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
-
সঠিক দিকনির্দেশনা – ইউটিউব, ফেসবুক গ্রুপ, বা অভিজ্ঞদের থেকে শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
অনলাইন আয়ের পথ সহজ না হলেও এটি একটি বাস্তব সম্ভাবনা। সাইফুলের গল্প আমাদের শেখায়, সীমাবদ্ধতা আমাদের থামাতে পারে না যদি আমরা শেখার আগ্রহ ও পরিশ্রম নিয়ে এগিয়ে যাই। ইন্টারনেট কেবল বিনোদনের জন্য নয়, এটি হতে পারে জীবনের মোড় ঘোরানো একটি মাধ্যম।
তাই আজই শুরু করুন শেখা, গড়ে তুলুন নিজের দক্ষতা, আর হয়তো আগামী দিনের গল্পে আপনিই হবেন নায়ক।