ইমাম আবু হানিফা জীবনী আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে জানব যিনি একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং হিজরীর প্রথম শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব।
আর এই মহামানবের নাম ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাইহি। তাহলে জেনে নেয়া যাক ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে ।
জন্ম, নাম ও বংশধর
ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি এর পুরো নাম হল আবু হানিফা আল-নোমান ইবনে সাবিত ইবনে যুতা ইবনে মারযুবান আর তার উপনাম হলো ইমাম আবু হানিফা। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে ইমাম আবু হানিফা নামেই তিনি সমাধিক পরিচিত।
ইমাম আবু হানিফা জীবনী ইসলামী ফিক্বহের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ অপরিচিত চারটি সুন্নি মঝাব এর একটি হানাফী মাযহাব । আর এর প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাইহি। উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক.
রাজত্বকালে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি ইরাকের কুফা নগরীতে ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছয় বছর বয়সে আব্দুল মালিক মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি পিতার সাথে হজে গিয়েছিলেন।
তার পিতা আফগানিস্তানের একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তার পিতার বয়স যখন ৪০ বছর তখন আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির জন্ম গ্রহণ করেন। বংশধরের দিক থেকে তাকে অ আরবিও বলে ধরা হয়ে থাকে। কারণ তার দাদার নামের শেষে জ্যোতি বংশের উল্লেখিত রয়েছে।
প্রখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ খতিবে বাগদাদে আবু হানিফার নাতি ইসমাইল বিন হাম্মাদের বক্তব্য থেকে আবু হানিফার বংশের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদ আহমাদ আবু হানিফাকে পারসিক বংশদুত বলে দাবি করেন। আবু হানিফার বংশ নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য.
হাদিসশাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ
তিনি কাবুলের পারসিক বংশদুত। প্রথমত তিনি কুফা শহরে ইলমে কালাম শিক্ষা গ্রহণ করেন। ২০ বছর বয়সে তিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। তিনি ইলমে অর্জনের জন্য ইমাম হাম্মাদের নিকট শিক্ষা কারা অংশগ্রহণ করেন। ইমাম ছিলেন তাঁর বিশেষ ওস্তাদ ।
তিনি ছাড়াও তাঁর গুরুজনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০০ । ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাই হের প্রাথমিক জীবন কেমন ছিল এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ বেশি কিছু দিতে পারেননি। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ কাপড় ব্যবসায়ী ।
ব্যবসায়িক জীবন
ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির পৈতৃক পেশা ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ইরান থেকে শুরু করে ইরাক সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিপুল পরিমাণ মূল্যবান কাপরের আমদানি ও রপ্তানি হতো । পৈতৃক ব্যবসা সুবাদে তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন ।
তৎকালীন বিশিষ্ট উলামাগণের মধ্যে সম্ভবত তিনি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিত্তবানদের হাদিয়া অথবা প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের তারা জীবিকা নির্বাহের ইলমের সেবা এবং তার নিকট সমাবেত গরিব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার দীর্ঘ করার ব্যবস্থা করতেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন । পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী । তার মৃত্যুর পরেই ব্যাথা দিতে হয় যুবক ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাইকে । ইমাম আবু হানিফা জীবনী তে নিম্নে উল্লেখিত সাহাবাদের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন
আনাস ইবনে মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আফওয়া, আব্দুল তোফায়েল, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ ইত্যাদি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লা আলাইহি হাদীস শাস্ত্রে অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন ।
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি এর অন্যতম ওস্তাদ ইব্রাহীম ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি বেশিরভাগ তুলসী হাদীস বর্ণনা করেছেন এই বিন ইব্রাহীম ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির ছাত্র ছিলেন। তিনি ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহ আলাই হের সম্পর্কে বলেন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লা আলাহি সে সময়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম ছিলেন।
তিনি বলেন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির হাদিসের নাসিক ও মানসুখ নির্ণয় ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি তার শহরের যেসব হাদিস পৌঁছেছে তার মধ্যেও মোহাম্মদের তিরোধান এর সময়কাল সর্বশেষ আমল কি ছিল সেসব তার মুখস্থ ছিল।
ইয়াহিয়া ইবনে মাসউদ বলেন একদিন আমি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির ঘরে প্রবেশ করি সেখানে তার কিতাব ভরপুর ছিল আমি জিজ্ঞাসা করলাম এইগুলো কি তিনি বললেন এগুলো সব হাদিসের কিতাব। ইমাম আবু হানিফা জীবনী যার মধ্য আমি সামান্য কিছু বর্ণনা করেছি আর সেগুলোই ফলপ্রদ।
কাজীর পদ প্রত্যাখান
ইমাম আবু হানিফা জীবনী ৭৬৩ হিজরী আব্বাসীয় বংশের আল-মনসুর আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন ।
কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তার পরবর্তীতে তার ছাত্র আবু ইউসুফ কে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে আবু ইউসুফ আল মনসুর কে ব্যাখ্যা দেন। তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না ।
আল মনসুরের এই প্রস্তাবের পিছনে তার নিজস্ব কারণ ছিল আবু হানীফা রহমতুল্লাহি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। আর এই অভিযোগের ব্যাখ্যা আবু হানিফা রহমাতুল্লা আলাহি বলেন আমি যদি মিথ্যা বলি তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে আমার মতামত এর সঠিক।
কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতি পদে একজন মিথ্যাবাদী কে বসাবেন। এই ব্যাখ্যার উত্তরে আল-মনসুর আবু হানীফা রহমতুল্লাহি কে গ্রেপ্তার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। এমনকি বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতেন কে তার সাথে দেখা করতে পারবেন।
মৃত্যু
৭৬৭ সালের আবু হানিফা কারাগার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার নয় কেউ কেউ বলেন ইমাম আবু হানিফা আল মনসুরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্টা করেন এজন্য তাকে জেলখানার ভিতরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
ইমাম আবু হানিফা জীবনী আবার কেউ কেউ বলেন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে জেলখানায় বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হয়েছিল। এটা বলা হয়ে থাকে যে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির জানা যায় অনেক লোক সমাগম হয়েছে ।
ইমাম আবু হানিফা জীবনী সর্বশেষ
ইতিহাসবিদ খাতির পক্ষে বলা হয় তার জন্য লোকজন ২০ দিন পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিল । পরবর্তীতে অনেক বছর পর বাগদাদের পাশে আধারে আবু হানিফা নামের মসজিদ তৈরি করা হয়। ১৫৩৩ উসমানিয়রা পুনরায় ইরাক দখল করে ও মাজার সহ অন্যান্য নিদর্শন পুন নিমার্ন করে ।
ইমাম আবু হানিফা জীবনী পোষ্টটি ভাল লেগে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটি পাশে থাকবেন । ধন্যবাদ