কিডনি দেহের রেচন প্রক্রিয়া সহ সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ নির্গমনের কাজ করে কিডনি তবে কিডনি যেকোনো মুহূর্তে অকেজো হয়ে পড়তে পারে ।
এর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে তাই শুরু থেকেই কিডনির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা জরুরি কারণ যদি কিডনি সমস্যার লক্ষণ শুরু থেকে জানা যায় ।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আপনার জানতে হবে কিডনি কী? এর কাজ কী ?
কিডনি কী
প্রাণিদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনী । যা আমাদের দেহের রেচন তন্ত্রের প্রধান অংশ। এর প্রধান কাজ রক্ত ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) পৃথকীকরণ ও মূত্র উৎপাদন।
কিডনি ছবি
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রাথম পর্যায়ে কিডনি রোগের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্রম ক্ষমতা কমতে থাকলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করতে থাকে।
শরীরে ক্ষুধামন্দা, শরীরে ওজন হ্রাস পাওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে (হাত, পা, মুখ) পানি জমে ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া।
প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, শরীরে ক্লান্তিভাব আসা, ঘুম কম হওয়া, অসুস্থ বোধ করা, শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হওয়া, মাঝে মাঝেই মাথাব্যথা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।
আরও পড়ুন : কিডনি রোগের লক্ষণ
দুর্বলতা
কিডনির সমস্যার লক্ষণগুলো সম্পর্কে দুর্বলতা কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হতে দুর্বলতা ।
আর এই দুর্বলতা আসে রক্তশূন্যতা থেকে কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ করতে না পারে তাহলে রক্ত ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে।
যার কারণে নতুন করে ব্লাড সেল উৎপন্ন হয় না এছাড়া কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপোয়েটিন উৎপন্ন করতে পারে না
চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতা
শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশই হচ্ছে ইউরিয়া কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের হতে পারে না বরং রক্তে মিশে যায় ।
এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায় মানসিক অস্থিরতা ঝাপসা দেখা এধরনের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক হয় ।
মূত্রের রং পরিবর্তন
কিডনি সমস্যায় মূত্রের রং পরিবর্তন হয়ে যায় কারণ তিনি অক্ষমতায় রেনাল কিউবি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা পলিইউরিয়া সৃষ্টি করে ।
আপনার অধিক পরিমাণে মূত্র তৈরি কাজ করে তবে কিডনির অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে মুছে পরিমাণ তত কমবে এবং রং গাঢ় হলুদ কমলা রঙ হয়ে যাবে ।
মুখে অরুচি ওজন কমা
রক্তে অত্যধিক পরিমাণে অ্যামোনিয়া মুখে অরুচি ওজন হারানোর মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি করে যেই রোগটা সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে যাচ্ছে ।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা
বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে এ বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ ই-বর্জ্য যখন রক্তের সাথে ফুসফুসে পৌঁছায়।
তখন ফুসফুসে বর্জ্য বের করার জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। এর কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না এটা আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে
কিডনি ব্যাথার লক্ষণ
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় চারপাশে ব্যথা কিডনি সমস্যা থাকলে পিঠ, মেরুদন্ড, পেট এবং পায়ে ব্যথা বা ক্ষাত অনুভব করা যেতে পারে।
কিডনি সমস্যার সমাধান
কিডনি ভালো রাখার উপায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা ও প্রস্রাবে অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন নিয়ন্ত্রণে রাখা ।
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের কিডনির কার্যকারিতা প্রতি ছয় মাস অন্তর পরীক্ষা করা ডায়রিয়া বমি রক্ত আমাশয় এর কারণে রক্ত পড়ে বা লবণ শুন্য হয়ে।
কিডনি বিকল হতে পারে তাই দ্রুত খাবার স্যালাইন খেতে হবে প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে চর্বিজাতীয় খাবার ও লবণ কম খাওয়া এবং পরিমিত পানি পান করা ।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন না করা প্রস্রাবের ইনফেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়া মাত্র দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় ।
কিডনি রোগ আছে কিনা এবং একটি সহজ সমীকরণে বের করা যায় কিডনি শতভাগের কত ভাগ কাজ করছে একটি হলো প্রস্রাবে
অ্যালবুমিন বা মাইক্রো-অ্যালবুমিন যায় কিনা এবং অন্যটি হলো রক্তের ক্রিয়েটিনিন তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা হলে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না তাই কিডনির নিয়মিত চেকআপ করা উচিত ।
আরও পড়ুন :
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
মূত্রত্যাগের পরিমাণ
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার একটি উপায় হলো মূত্রত্যাগের পরিমাণ দেখা। স্বাস্থ্যসম্মত কিডনি সাধারণত প্রতিদিন প্রতি দিন ১-২ লিটার মূত্র উত্পাদন করে।
তাই মূত্রত্যাগের পরিমাণ পর্যাপ্ত ও স্বাভাবিক হলে কিডনি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়।
মূত্রের রঙ ও সূষমতা:
স্বাস্থ্যসম্মত কিডনি সাধারণত পরিষ্কার এবং সাদা মূত্র উত্পাদন করে। যদি মূত্রে অন্যরকম রঙ বা মিশ্রণ দেখা যায় বা মূত্র না হয়, তবে কিডনির সমস্যা থাকতে পারে।
ব্যথা বা ব্যঙ্গময়তা
যদি কিডনি ভালো না থাকে, তবে পিঠ বা পেটে ব্যথা অনুভব করা যেতে পারে। এটি একটি সময়ে অথবা সমস্ত শরীরে অনুভব হয় ।