ডায়াবেটিস কমানোর উপায় – ডায়াবেটিস এখনকার সময় বেশিরভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। আপনার ডায়াবেটিস আছে জেনেও সঠিক নিয়ম কানুন মেনে না চললে শরীর কি সর্বনাশ ঘটাচ্ছেন।
আপনি তা যদি জানতেন তবে আজ থেকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতেন এবং নিয়ন্ত্রণ এর পেছনে উঠে পড়ে লাগবেন। তাহলে আজকের এই পোষ্টে ডায়াবেটিসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালভাবে জেনে নেই ।
ডায়াবেটিস কি
সহজ কথায় বলতে গেলে শরীরে ইনসুলিন কমে যাওয়াকে ডায়াবেটিস বলে । বাংলায় বহুমূত্র রোগ। কারণ ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ ।
মানবদেহে অগ্নাশয় পেনক্রিয়াস নামে একটি অর্গান থাকে । অগ্নাশয় থেকে অনেক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় ইনসুলিন তাদের মধ্যে অন্যতম ।
ইনসুলিনের কাজ হলো রক্তের সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখা । যদি কোনো কারণে ইনসুলিন ক্ষরণ কম হয় এর কার্যক্ষমতা কমে যায় তখন রক্তের সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায় । আর মানবদেহের পরিস্থিতিকে ডায়াবেটিস বলে ।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় – এই ডায়াবেটিস কিডনি জনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ । নিউরোপ্যাথি । দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার রোগের কারণ হতে পারে । তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
ডায়াবেটিস কেন হয়
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকাটা খুব প্রয়োজন। ডায়াবেটিস কেন হয়? বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে ।
যেমন স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন, উচ্চরক্তচাপ, বংশগত কারণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে । এছাড়াও এইচডিএল কোলেস্টেরল নিম্নমাত্রায় থাকলে ।
ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি
এখন প্রশ্ন হল সবারই কি ডায়াবেটিস হতে পারে। এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ সবারই ডায়াবেটিস হতে পারে । তবে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন ডায়াবেটিস হতে পারে।
ডায়াবেটিস মূলত চার ধরনের টাইপ ১ ,ডায়াবেটিস টাইপ ২ ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন এবং সেকেন্ডারী ডায়াবেটিস মেলিটাস ।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস কি
টাইপ ১ ডায়াবেটিস কি এবং কাদের হয়। এর আরেক নাম ইন্সুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস । সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সী মানুষের এই ডায়াবেটিস হয় । এমনকি বাচ্চাদের হতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই ।
শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন ক্ষতিকর পদার্থ ব্যাকটেরিয়া ভেবে ভুলবশত অগ্ন্যাশয় এর উপকারী একটি কোষ ইনসুলিন উৎপাদন করে যার নাম আয়ুশ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স এই কোষটাকে ধ্বংস করে ফেলে তখন আর ইনসুলিন বের হতে পারে না । যার কারণে রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় ।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি
ডায়াবেটিস টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি? এবং কাদের হয় । এই টাইপের ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা কমে যায় বা কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয় যাকে মেডিকেল সাইন্সে রিলেটিভ দেফিশিয়েন্সি অফ ইন্সুলিন বলা হয়।
অনেক সময় মানবদেহে প্রয়োজনের তুলনায় ইনসুলিন কম নিঃসৃত হয় । একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন । যদি কম হয় তখন ইনসুলিনের কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা ।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় এই অবস্থা কি টাইপ টু ডায়াবেটিস বলে। সাধারণত ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সী লোকদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায় ।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কি
গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে যে ডায়াবেটিস হয় সেটা হল গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং ক্লাস এ ১ ও ক্লাস এ ২ দুই ভাগে ভাগ করা যায় ।
ক্লাস এ ১ সাধারন ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়ামে ভালো হয়ে যায় । কিন্তু ক্লাস এ ২ এর ক্ষেত্রে ইনসুলিন নিতে হয় ।
সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং কখন হয়
অন্যান্য কারণে যে ডায়াবেটিস হয় তাকে বোঝায়। যেমন অগ্ন্যাশয় অসুখ থাকলে বিভিন্ন ঔষধ সেবনের কারণে, ভাইরাস ইনফেকশনের কারণে ইত্যাদি কারণে এ ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে।
আশাকরি এখন আপনি নিতে পারবেন আপনি কোন পরিস্থিতিতে আছেন এবং কোন ধরনের ডায়াবেটিস আপনার হতে পারে।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
সকালে খালি পেটে সুগারের নর্মাল লেভেল ৬.১ থেকে ৭.০ মিলিমিটার এবং ভরা পেটে বা সকালে খাবারের দুই ঘন্টা পর সুগারের নর্মাল লেভেল ৭.৮ থেকে ১১.0 মিলিমিটার এর চেয়ে বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নিতে হবে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিসের লক্ষণ আছে তবে যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত সেগুলো হলো :
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া বা পলিইউরিয়া
- ঘনঘন তৃষ্ণা-জাগানিয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- ক্ষত ভাল হতে সময় লাগে।
- রাগান্বিত থাকা
- ক্ষুধামন্দা লেগে থাকা
- মনোযোগ কমে যাওয়া
- খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
এরূপ পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়। তবে বিভিন্নভাবে গিয়ে কন্ট্রোলে রাখা যায়। যেমন খাদ্যতালিকার পরিবর্তন করে ।
যেসব খাবারে সুগার কম এবং যেগুলো খেলে ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা বাড়ে । বিশেষজ্ঞরা ডায়াবেটিক রোগীদের সেসব খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
যেমন শাকসবজি , দুধ, ডিম ইত্যাদি এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন । সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় ।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
অনেকেই আছেন যাদের তিন বেলায় ভাত খেতে হয় । ভাত যতই কম খাবেন ততোই ভালো । সকালে ও রাতে ভাতের পরিবর্তে এক থেকে দুইটি রুটির সাথে সবজি দই ফল খেতে পারেন।
দুপুরে ভাতের সাথে চর্বিযুক্ত মাছ কিংবা মাংস খুব অল্প পরিমাণে সাথে শাকসবজি খেতে পারেন। চিনিজাতীয় খাবার বর্জন করুন । পর্যাপ্ত পানি পান করে । পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান আপনি রক্তে শর্করার মাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে ।
একটি পর্যবেক্ষণ গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বেশি পরিমাণে পানি পান করেন তাদের রক্তে উচ্চ শর্করার বিকাশের ঝুঁকি কম থাকে । পরিমাণমতো ভিটামিন-ডি গ্রহণ করে ।
যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন । পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৪৩ শতাংশ কমিয়ে দেয় ।
জীবনযাপনের পরিবর্তন করে
নিয়মিত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দ্রুতভাবে হাঁটুন। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত হাতাহাতি খুবই গুরুত্ব । যত বেশি হাঁটবেন কত ক্যালরি বার্ন হবে তখন শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন হবে। সাথে ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। ধূমপান এবং অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ত্যাগ করতে হবে ।
ডায়েবেটিস ওষুধ
জীবন-যাপনের পরিবর্তনের ডায়াবেটিস পুরোপুরি কন্ট্রোলের না আসে তখন ওরাল এন্টি ডায়াবেটিস এবং ইনসুলিন নিতে হয়। যাতে শুধুমাত্র ওরাল anti-diabetic ট্রাক খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে তাদের ইনসুলিন দেওয়ার প্রয়োজন নেই ।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কোনো খাবারই একেবারে খাওয়া যাবে না। এমনটা ডাক্তারদের পরামর্শ নয় তবে কিছু খাবারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে। নিয়মিত ডায়াবেটিক রোগীর খাবারের তালিকা মেনে চলা প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করা এবং নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা শুধু সম্ভবই নয় বরং খুব সহজ ।
যে খাবারগুলো বেশি খাবেন
উপকারী চর্বি যেমন বাদাম , কোয়েল , মাছের তেল ইত্যাদি শাকসবজি ও ফলমূল টাটকা ও রঙিন শাকসবজি ভালো । অল্প পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম অল্প চর্বিজাতীয় দুধ ইত্যাদি।
যে খাবারগুলো কম খাবেন
অতিরিক্ত তেল দিয়ে রান্না করা খাবার ফাস্টফুড চিনিজাতীয় খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন পাস্তা অনেক সময় বিভিন্ন মাছ এবং মাংসের প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার থাকে সেগুলো বর্জন করতে হবে ।
কি খেলে সুগার কমে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কিছু খাবার ব্লাড সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। এইসব এর মাধ্যমে অনেকটা প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা যায় ।
- ব্রকলি
- সামুদ্রিক মাছ,
- কুমড়ার বিচি
- বাদাম
- হেরোস সিম
- শিমের বিচি
- অ্যাভোকাডো ফল,
- ওরশ
- সাইট্রাস ফল
- আমলকি
- কমলা
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার
- কাঠবাদাম
- আনারস
যেসব কারণে ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু বেশি হয়
ডায়াবেটিস হলো সকল রোগের জননী । এর কারণে সহজে ডায়াবেটিক রোগীর মাল্টিপল ডিজিজ বহু রোগ হয় । কারণ ডায়াবেটিস শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ।
সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিক রোগী হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । এই হার প্রায় ৭০% প্রায় ১০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী মারা যায় কিডনিজনিত রোগে বা কিডনি ফেইলিওর করে। ১০% রোগী মারা যায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে।
বাকি ১০% ডায়াবেটিক রোগী অন্যান্য রোগের কারণে মারা যায় যেমন ইনফেকশন ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস রক্তে ইত্যাদি কারণে একটি নীরব ঘাতক
দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আশা করি এনএইচএস এবং ডায়াবেটিস ইউকে সংস্থার এই টিপস গুলো আপনাদের কাজে লাগবে । পোষ্টটি অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না । সকলকে ধন্যবাদ ।