ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ: হাসনাত-সারজিসকে ‘হত্যাচেষ্টার’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ছাত্রদের প্রতিবাদী কণ্ঠ উচ্চারিত হয়েছে। সম্প্রতি হাসনাত ও সারজিস নামের দুই শিক্ষার্থীকে ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ বিদ্যাপীঠ। এই ঘটনায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচি।
ঘটনার পটভূমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত ও সারজিসকে সম্প্রতি অজ্ঞাত ব্যক্তিরা প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার সময় তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। তাদের গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উভয়ের অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তারা প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত।
ঘটনার দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশে অনেকেই এ হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, অপরাজেয় বাংলা এবং টিএসসির সামনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা ছিল, “হত্যাচেষ্টার বিচার চাই”, “আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?” এবং “ঢাবি ছাত্র-ছাত্রী নিরাপত্তাহীন কেন?”
বিক্ষোভকারীদের একাংশ জানান, “এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে মুক্ত চিন্তা ও মানবিকতা চর্চার সুযোগ রয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন বর্বর হামলা অগ্রহণযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত, কিন্তু তা আর নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা
বিক্ষোভ চলাকালে প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হামলার ঘটনার পর থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পুলিশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলাকারীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। তবে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটনাটি উপেক্ষা করার অভিযোগ তুলেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি
বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি নির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেছেন:
- হাসনাত ও সারজিসের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
- বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
- প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা।
- ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ।
শেষ কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই দেশের ছাত্ররাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল নিজেদের নিরাপত্তা নয়, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনারও দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।