দুআ গুরুত্ব ও তাৎপর্য দুআ অর্থ প্রার্থনা করা, আপন রবকে একান্তে ডাকা; তাঁর সামনে নিজ সত্তাকে পেশ করা। নিজের প্রয়োজন-আরজি তুলে ধরা। দুআ হল মুনাজাত— প্রভুর সঙ্গে বান্দার একান্ত আলাপ।
হাদীস শরীফে দুআকে বলা হয়েছে ইবাদতের মূল-মগজ। কারণ, দুআর মধ্যে রবের সামনে বান্দার আবদিয়াত ও দাসত্ব পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়।
এসময় বান্দা আল্লাহ ছাড়া সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে, সকল উপায়-উপকরণকে পিছে ঠেলে একমাত্র দয়মায় প্রতিপালকের সামনে হাজির হয়।
নিজের দীনতা ও হীনতা স্বীকার করে রবের সামনে নিজ উপায়হীনতা, অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করে। নিজ সত্তা ও ক্ষমতা সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে কায়োমনে ধরনা দেয় প্রভুর দরবারে।
এজন্যই দুআকে বলা হয়েছে ইবাদতের মূল-মগজ। বরং বলা হয়েছে ‘দুআই ইবাদত’ —ইবাদতের প্রকৃত ও সর্বোচ্চ মাধ্যম। নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ.
দুআই ইবাদত।
দুআ গুরুত্ব ও তাৎপর্য এরপর নবীজী সাল্লাল্লা হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত তিলাওয়াত করেন—
وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِيْنَ.
তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব (দুআ কবুল করব)। নিশ্চয়ই অহংকারবশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা মুমিন (৪০) : ৬০] —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৭৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৬৯
আল্লামা তীবী রাহ. বলেন, দুআ হচ্ছে আল্লাহর কাছে বান্দার সবোর্চ্চ বিনয় প্রদর্শন এবং তাঁর নিকট নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা এবং তাঁরই কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা। —তুহফাতুল আহওযায়ী ৯/২২০
পরিভাষায় দুআ হচ্ছে, স্রষ্টার নিকট বান্দার সাহায্য কামনা, তাঁকে ডাকা, তাঁর প্রতি নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন, সামর্থ্য সক্ষমতা তারই কাছে প্রার্থনা করা আর সকল কিছু থেকে নিজেকে বিমুখ করা। এতে আল্লাহর প্রশংসাও থাকে এবং অনুগ্রহপ্রাপ্তি তাঁরই প্রতি সম্পর্কিত করা হয়। —তাফসীরে কাবীর ৫/৯৭
দুআ গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইমাম যাজ্জাজ রাহ. (মৃ. ৩১১ হি.) বলেন, দুআ তিন প্রকার :
১. আল্লাহর প্রশংসা ও তাওহীদ। যেমন, ‘লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা।
২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা। যেমন, রাব্বিগফির লানা (হে আমার রব! আমাদের ক্ষমা করুন) বলা।
৩. দুনিয়ার সমস্যা সমাধান ও দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করা। যেমন, হে আল্লাহ রিযিক দিন, সন্তান দিন ইত্যাদি বলা। [দ্র. আদাবুদ দুআ, ইউসুফ ইবনু আব্দুল হাদী, পৃ. ৩৫, দারুন নাওয়াদির, বৈরুত]