বনি ইসরাইলের বাছুর পূজা আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন। বনি ইসরাইলের সামেরি নামক একটি ব্যক্তি ছিল । সে ছিল হযরত মুসা আলাই সালাম এর সম্পর্কে ভাগ্নী।
বনি ইসরাইলের বাছুর পূজা
ফেরাউনের রাজত্বকালে ঝগড়ার সময় স্ত্রীকে হত্যা করে সামেরি পালিয়ে যায়। অবশ্য হযরত মুসা আলাই সাল্লাম তাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। সেই সামেরি বড় হয়ে স্বর্ণকারের কাজ শিখে।
হযরত মুসা আলাই সালাম এর নীল নদ পার হওয়ার সময় সামেরি সঙ্গে ছিল না। সে মিশরে আত্মগোপন করেছিল।
হযরত মুসা আলাই সাল্লাম যখন তার ভাই হারুন এর উপর উম্মতের দেখাশোনার দায়িত্ব অর্পণ করে যায়। ৭০ জন সঙ্গি নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যান। তখন সামেরি স্বর্ন গলিয়ে একটি বাছুর মূর্তি তৈরি করে ।
বাছুরটি তৈরীর ক্ষেত্রে সে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে যাতে অতি সুন্দর ও নিখুঁত একটি বছরের প্রতিকৃতি তৈরি করতে সক্ষম হয় । সামেরি বয়স অল্প হলেও সে যথেষ্ট বিচক্ষন ও সাহসী ছিল।
যখন ফেরাউন কয়েক লক্ষ সৈন্য নিয়ে হযরত মুসা আলাই সালাম এর পেছনে ধাওয়া করে । তখন সামেরি অন্যান্য লোকজনের সাথে পিছনে পিছনে অবস্থা দেখার জন্য অগ্রসর হয়।
ফেরাউন নীল নদে যাত্রা মুহূর্তে সামেরি দেখল একজন সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি একটি ঘোড়ার পিঠে ব্যস্তভাবে চতুর্দিকে ছোটাছুটি করছে।
এই ব্যক্তির ঘোড়ার পা যেখানে মাটি স্পর্শ করছে। সেখানে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে তাজা খাস গজিয়ে উঠছে । তখন সামেরি মনে করলো, এই ব্যক্তি মানুষ নয় সে নিশ্চয় আল্লাহর ফেরেশতা।
তখন সে ঘাসের নিচ থেকে কিছু মাটি সংগ্রহ করে রেখে ছিল । স্বর্ণমূর্তি তৈরি করার পরে তার মুখের মধ্যে সেই ঘোড়ার খুরের মাটি রেখে দিল ।
আল্লাহ তায়ালার কুদরত মানুষের জ্ঞানের নাগালের বহির্ভূত বস্তু পাথরের মূর্তির মুখে মাটি রেখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে হাম্বা হাম্বা করে ডাকলো। তখন সামেরি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো এবং ইসরাইল ডেকে বলল আমাদের ঘরে আল্লাহতালা অবস্থান নিয়েছেন।
তিনি স্বনের নির্বাচনের আকৃতিতে অবতরণ করেছেন। তোমরা একে একে সেজদা করা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে মঙ্গলময় করে নাও ।
সামেরি আরও বলল আল্লাহতালা আমাকে আরো জানিয়েছেন , যে সমস্ত সঙ্গীদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে গিয়েছে সে সমস্ত সঙ্গীতাকে বেঁচে নেই । হযরত মুসা নির্বিঘ্নে ফিরতে পারে কিনা সন্দেহ আছে।
অতএব তাঁর প্রতি তৌরাত কিতাব নাযিল হয়েছে কথা ছিল তা ছিল মুসা আলাই সালাম এর একটি ধোকাবাজ ওয়াদা। তোমরা আশার বাণী তাকিয়ে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হও না।
তাড়াতাড়ি এই স্বর্ণ-মন্ডিত খোদার নিকট এসে আসিস গ্রহণ করো । তার প্রতি ঈমান এনে নাজাতের পথ পরিষ্কার করো । কুরআনের ভাষায়,
”সামেরি তাদের জন্য এসব অলংকারাদি হতে গোবৎসের দেহ বের করে আনল । গরুর মত শব্দ করত তখন সে বলতে লাগল এটাই তো তোমাদের ও মুসার ইলাহ” সূরা ত্বহা আয়াত নম্বর ৮৮ ।
সামেরির কথা শুনে বনি ইসরাইলের কিছু সংখ্যক লোক সেখানে এসে দেখল অতি সুন্দর আকৃতির স্বর্ণ-মন্ডিত বাছুর ডাকছে। বাছুরের নিকট মানুষ যে কামনা করে তাই পূরণ হয়।
যে ব্যক্তি বাছুরের নিকট কোন কিছুর জন্য দোয়া চাই বাছুর যদি দুটো ডাক দেয় তাহলে তা কবুল হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। এ ব্যাপারে বাছুর যদি একটি ডাক দেয় তবে ধরে নেওয়া হয় প্রার্থনাকারী দোয়া কবুল হয়নি।
তখন তাকে অপেক্ষা করতে হয় এবং মূর্তির সম্মুখে হাদিয়া পেশ করতে হয়। এইভাবে ২০ দিন যাবত মূর্তির সম্মুখে অবিশ্রান্ত ভীড় জমতে থাকে। দিন দিন মূর্তি পূজকদের দল বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সারাদিন ব্যাপী এক বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বনী ইসরাঈল কমের প্রায় অর্ধেক মানুষ অংশগ্রহণ করত। এই সময় হযরত মুসা আলাই সালাম তাওরাত কিতাব নিয়ে দেশে আসে ।
এসে সামেরি বাছুর তৈরি ও বনি ইসরাইলদের পূজা-অর্চনার কথা শুনে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। তাওরাত কিতাব এর ফলক কাধ থেকে নামিয়ে হযরত হারুন এর দাড়ি ও চুল ধরে প্রহার আরম্ভ করলেন।
হযরত হারুন তখন কাকুতি সঙ্গে বললেন হে সহোদর ভাই তুমি বিশ্বাস করো আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও এর কোন প্রতিকার করতে সক্ষম হয়নি । তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে তবুও আমি তাদেরকে বারণ করতে দ্বিধাবোধ করেনি ।
হযরত মুসা আলাই সালাম তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কে এই পাথরের মূর্তি তৈরি করেছে ?হযরত হারুন বলেন আমাদের সম্পর্কীয় ভাগ্নে সামেরি । হযরত মুসা আলাই সালাম বলেন কোথায় সে বেইমান?
তাকে এখনই আমার সম্মুখে হাজির করো। হযরত হারুন ও অন্যান্য সামেরিকে হযরত মুসা আলাই সালাম এর সম্মুখে নিয়ে আসলেন । তাকে জিজ্ঞেস করলেন কি দিয়ে তৈরি করেছে ?
তখন জিবরাঈল আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন থেকে মাটি সংগ্রহ করে স্বর্ণের তৈরি বাচ্চাদের মুখে রেখে দেওয়ার বিবরণ বিস্তারিতভাবে তাকে বলল। সে আরও বললো ওই মাটির মূর্তির মুখে পুরে দিলে সে ডাকবে ।
একথা আমাদের জানা ছিল না । এটা মহান আল্লাহতালার একটি কুদরত । হযরত মুসা আলাই সাল্লাম আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বললেন হে মহান প্রভু মূর্তি না হয় সামেরি তৈরি করেছে কিন্তু তার মুখের শব্দ কে দিয়েছে?
আল্লাহ তাআলা উত্তরে বললেন, আমি দিয়েছি হযরত মূসা বললেনঃ হে প্রভু তোমার কুদরতি রহস্য বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি যাকে যেভাবে চাও সেভাবে পরিচালনা করো এতে বাধা প্রদানের ক্ষমতা কারো নেই ।
হে আল্লাহ তুমি আমার অন্যায় ও অতিরিক্ত কৃতকর্মের অপরাধ ক্ষমা করো। আল্লাহ তা’আলা বলেন হে নবী তুমি বাছুর পূজারীদের কে হেদায়েতের দাওয়াত দাও।
হযরত মুসা আলাই সালাম তখন বনি ইসরাইলের নিকট গিয়ে বাছুর পূজার অপকারিতা সম্বন্ধে বুঝিয়ে বললেন । আল্লাহ তালার উপর ঈমান আনার জন্য অনুরোধ করলেন।
এমনকি তিনি তৌরাত কিতাব এর উপর আমলের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেক বুঝালেন। বনি ইসরাইল হযরত মুসা আলাই সালাম এর কথায় মৌখিকভাবে অন্যায় স্বীকার করল। কিন্তু মনে মনে বাছুর পূজার প্রতি তাদের গভীর আকর্ষণ থেকে গেল।
তখন আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আলাই সালাম কে জানিয়ে দিলেন বনি ইসরাইলদের অপরাধ ক্ষমার দুটি পথ আছে । প্রথমটি হলো শূন্য অবস্থায় তারা দেশত্যাগ করতে।
দ্বিতীয়টি হলো তারা এক অন্ধকার স্থানে সমবেত হয়ে তালওয়ার বাজি করে একে অপরকে হত্যা করবে। হে নবী অতিসত্বর আপনার উম্মতের সাথে কথা বলে তওবা দুটি পন্থার মধ্যে একটি গ্রহণ করতে বলুন।
না হয় সারা দেশব্যাপী আমি গজব নাজিল করব। হযরত মুসা আলাই সাল্লাম আল্লাহর আদেশ অনুসারে বনি ইসরাইলের সকল মানুষকে এক জায়গায় ডেকে আল্লাহ তায়ালার ফরমান তাদেরকে জানিয়ে দিলেন ।
তখন বনি ইসরাইলের লোকেরা ভেবে চিন্তে বলল আমাদের পক্ষে দেশটাকে চাইতে তালওয়ার বাজি উত্তম। আমরা গ্রহণ করব তারপর নবীর আদেশ অনুসারে দুইদিন পর তাদের মধ্যে ঈমানদার ব্যক্তিরা অন্ধকারে এক জায়গায় জমা হয়ে উলঙ্গ শরীরে তলোয়ার বাজি আরম্ভ করলো।
কয়েক ঘণ্টা এভাবে চলার পর এ আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাদের তওবা কবুলের ঘোষণা দেয়া হয়। তখন যারা ভেবেছিল তাড়াতাড়ি বন্ধ করলো কয়েক ঘণ্টা তলোয়ার বাতিল হলে নাকি সেখানে অনেক বনী ইসরাঈল নিহত হয়েছিল।
হযরত মুসা আলাই সালাম তখন অস্থির হয়ে পড়লেন আল্লাহতালা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে পড়লেন যারা নিহত হয়েছে তারা কোনদিন বেহেশতের লাভ করার যোগ্য পাত্র ছিল না। তবে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে তারা প্রাণ দিয়েছে এখন তাদের জন্য বেহেশতে প্রবেশ করা ওয়াজিব ।
বাকি যারা এ কত লোকে তালের জামাতে হাতে আসেনি তাদেরকে তৌরাত কিতাব পাঠ করতে বলুন এবং তার যাবতীয় হুকুম পালন করতে বলুন। না হয় তাদের প্রতি কঠিন আজাব আসবে।
নবী তখন আল্লাহ তা’আলার পয়গম অনুসারে বাকি সকল বনি ইসরাইলের লোকদেরকে আল্লাহ তা্আলার ঘোষণা জানিয়ে দিলেন। তারা বলল আমরা তৌরাত পরব। কিন্তু মানবো না আর যদি মানি তাহলে পড়বোনা দুটির একটি আমরা পালন করব।
এই কথাই আল্লাহতালা অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাদের প্রতি গজব নাজিল এর ব্যবস্থা করলেন । বড় বড় পাহাড় উঠিয়ে তাদেরকে চাপা দিয়ে খতম করে দেওয়ার জন্য জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে হুকুম দিলেন ।
হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম কয়েক হাজার পাহাড়তলী আকাশপথে বাতাসের সাহায্যে আকাশে এনে দিলেন তখন চতুর্দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল ।
এই দৃশ্য দেখে বনী ঈসরাইল ভীত হল তারপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম পাহাড় গুলোকে আরো নিচে নামিয়ে আনলেন।
এবার তারা স্পষ্টভাবে পাহাড়গুলোকে দেখতে পেল তখন তারা সকলে হযরত মুসা আলাই সালাম এর নিকট বিপদ মুক্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করল।
হযরত মুসা আলাই সালাম বললেন এবার গজব শুধু আমার দোয়াই হবে না অতএব তোমরা সকলেই সেজদা করে কান্নাকাটি করে আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো ।
তখন সকল মানুষ একত্রিত হয়ে কপাল মাটিতে মিশিয়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বলল হে আমাদের প্রভূ আমরা তোমার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার প্রেরিত তৌরাত কিতাব এর যাবতীয় আদেশ এবং নিষেধ আমরা পালন করব ।
আমরা নিয়মিত তেলাওয়াত করব। বনী-ইসরাঈলগণ অঝর নয়নে কেঁদে কেঁদে মাটি ভিজিয়ে ফেলল। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম নিজেও সেজদায় পড়ে উম্মতের গুনাহ মাফের জন্য কেদে কেদে দোয়া করলেন।
আল্লাহ তায়ালা নবীর দোয়া কবুল করলেন এবং পাহাড় গুলোকে সরিয়ে নেবার জন্য হযরত জিব্রাইল আলাই সাল্লাম কে হুকুম দিলেন। বনি ইসরাইল সিজদায় বসে মাথা কাত করে আড়ে আড়ে তাকিয়ে পাহারের অবস্থান দেখছে ।
যখন পাহাড়গুলো সরে গেল তখন তারা উঠে দাড়াল এবং স্বস্থির নিশ্বাশ ফেলল । এসব হওয়ার পর কিছু লোক গোপনে বাছুর পুজা করত। হযরত মুসা আ: এই খবর জানতে পেরে ।
একদিন তিনি সামেরির ঘরে গিয়ে বাছুরের মুতি ভেঙ্গে দিলেন । তা আগুনে দিয়ে ছাই করে দিলেন । এই দিকে একদল লোক নদীতে নেমে পানি পান করল । পরে তাদের শরীরে ফোচকা পরে শরীর বৎস হয়ে গেল । অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে তারা সবাই মারা যায়।
বনি ইসরাইলের বাছুর পূজা সর্বশেষ
বনি ইসরাইলের বাছুর পূজা পোষ্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করবেন । আর যেকোন সমস্যায় আমাদের ফোরাম যুক্ত হয়ে যেকোন প্রশ্ন করতে পারেন । আশা করি সবাই ব্লগইনফো বিডির সাথে থাকবেন ।
ধন্যবাদ