...

বনী ইসরাইলের জুরাইজের আশ্চর্য ঘটনা

402 views

বনি ইসরাইলের সেই দরবেশ ঘটনাটি বেশ আগের । বনি ইসরাইলের এক দরবেশ এর ঘটনা বুখারী মুসলিম সহ বেশ কিছু হাদিস গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং সাহাবীদেরকে ঘটনাটি শুনিয়েছেন ঘটনাটি। যেমন চমকপ্রদ বিস্ময়কর তেমনি শিক্ষণীয় বটে ।

বনী ইসরাইলের জুরাইজের আশ্চর্য ঘটনা

পৃথিবীর ইতিহাসে মায়ের কোলে শিশু কথা বলেছে এটিও তার অন্যতম। তাহলে চলুন গল্পটি শোনা যাক। অতীত যুগে বনি ইসরাইলের এক লোকের নাম ছিল জুরাইজ।

সে সময় চারিদিকে পাপের ছড়াছড়ি থাকলেও জুরাইজ ছিল একজন ভালো ধার্মিক প্রকৃতির। সর্বক্ষণিক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকত।

তাই দুনিয়ার কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে একান্ত ইবাদতের নিমগ্ন সময় কাটাতে সে কিছুটা নির্জন একটি জায়গা বেছে নেয়।

সেখানে সে একটি ইবাদত খানা তৈরি করেন এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। সংসারও দুনিয়াবী ব্যস্ততা ভুলে সে সর্বদা ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটাতে থাকে ।

ইবাদৎখানা পাশে এক রাখাল বাস করত। একদিন জুরাইজের মা তার কাছে আসে ইবাদৎখানা বাহিরে থেকে তার মা তাকে ডাকে। হে জুরাইজ তুমি কি একটু সাড়া দেবে?

কিন্তু সে সময় জুরাইজ নামাজ পড়েছিল । সে তার মায়ের ডাক শুনে ভাবতে লাগলো মায়ের ডাকে সাড়া দিব নাকি নামাজ টাকে শেষ করবো।

নামাজ নাকি মা ভাবতে ভাবতে তিনি নামাজকে অগ্রাধিকার দিলেন নামাজ শেষ করে বের হয়ে এসে দেখলেন তার মা চলে গেছে।

পরের দিন আবার ও তার মা এলো এবং ডাকতে লাগল যে জুরাইজ তুমি কি আছো? জুরাইজ দ্বিতীয় দিনও সেই সময় নামাজ পড়েছিল মায়ের ডাক শুনে ভাবলো আগে নামাজ পড়বো নাকি মায়ের ডাকে সাড়া দেব।

ভাবতে-ভাবতে নামাজ কে প্রাধান্য দিল। একপর্যায়ে মা ফিরে যায় নামাজ শেষ করে বাইরে গিয়ে দেখতে পেল মা চলে গেছে।

তৃতীয় দিন  মা আবার এলেন এসে জুরাইজ কে ডাকতে লাগলেন কিন্তু ঘটনাক্রমে আজকেও জুরাইজ নামাজ রত । জুরাইজ সেদিনও ভাবতে লাগলো আগে নামাজ শেষ করবো নাকি মায়ের ডাকে সাড়া দেব।

আগে আমার মা নাকি আমার নাম আছে। একদিকে মা ডাকছে অন্যদিকে সে রবের আদেশ পালন করছে । অনেক ভেবেচিন্তে জুরাইজ নামাজ কে অগ্রাধিকার দিল এবং ভাবল নামাজ শেষ করেই মায়ের ডাকে সাড়া দিবে।

মহাবিরক্ত হয়ে আরো জোরে ডাকতে লাগল। হে জুরাইজ তুমি কি আমার কথা শুনবে? যদিও জুরাইজের মা জানেন না যে তার ছেলে তখন নামাজ পড়ছে।

মা অনেকবার হাঁকডাক করে জুরাইজের কোন সাড়া পেল না । পরপর তিন দিন এরকম হয় মা ভীষণ মর্মাহত হল এবং রাগের বশে বদদোয়া দিয়ে বসল। আল্লাহ যেন তোকে পতিতার মুখ না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু না দেন।

রাগের বশে মায়ের এই অভিশাপ একসময় জুরাইজের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এর পরের ঘটনাটি খেয়াল করুন জুরাইজের দ্বীনদারিতা পরহেজগারিতা খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।

তার ব্যাপারে সমকালীন লোকেরা খুব বলাবলি করতে লাগল। আবার এক শ্রেণীর হিংসাবশত চক্রান্ত করতে লাগলো।

জুরাইজকে কীভাবে অপদস্থ করা যায় সে নিয়ে তারা ভাবতে লাগল তখন এক পতিতা তাদের চক্রান্তের স্বামীল হয়ে বলল আমি জুরাইজ অপদস্ত করতে পারব ।

মেয়েটির ছিল অপূর্ব সুন্দরী। সে জুরাইজের ইবাদত খানায় গিয়ে  কুপ্রস্তাব দিলো। কিন্তু তার ডাকে সাড়া না দিয়ে সরাসরি না করে দেয় ।মেয়েটি আবারো যায় কিন্তু জুরাইজ তাতে কর্ণপাত করে না।

মেয়েটি চক্রান্ত সফল না হয় ইবাদত খানা নিকটবর্তী সেই রাখালের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয় এবং বাচ্চা জন্ম দেয় । বাচ্চা জন্ম নিলে পতিতা মেয়েটির দাবি করে যে এই সন্তান জুরাইজের ঔরসজাত।

মেয়েটিকে রাজ দরবারে হাজির করা হয় রাজা জিজ্ঞেস করেন এ সন্তানটি কার সে উত্তর দেয় জুরাইজের । রাজা পুনরায় জিজ্ঞেস করে উপাসনালয়ের সেই ধার্মিক জুরাইজের।

সে উত্তর দেয় হ্যাঁ রাজা তখন নির্দেশ দেয় উপাসনালয়টি ভেঙে ফেলা এবং শরীরকে দরবারে হাজির কর ।লোকেরা কুঠারাঘাত েতার উপাসনালয়টি ভেঙে ফেলল এবং তার দুই হাত রশি দিয়ে খাটের সাথে বেধে তাকে নিয়ে রাজদরবারে চলল।

পথের মাঝে খানে পতিতা নারীদের মুখোমুখি হলো জুরাইজের তিনি তাদেরকে দেখে শুধু আক্ষেপ ভরা দৃষ্টিতে মৃদু হাসলেন। রাজা তাকে বলেন এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি ?জুরাইজ বলল তার কি ধারণা ?

রাজা বলেন তাঁর দাবি এই যে শিশু তোমার । জুরাইজ মেয়ে তাকে বললো সত্যিই কি তোমার এই ধারণা । সে বলল হ্যাঁ জুরাইজ জানতে চায় কোথায় সেই শিশু? লোকেরা শিশুটিকে দেখিয়ে দিল ।

জুরাইজ শিশুটির সামনে গেলেন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য কামনা করে শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলেন-হে শিশু তুমি বলো কে তোমার পিতা? শিশুটি তখন কথা বলে উঠল উত্তর দিলো ওই গরুর রাখাল আমার পিতা ।

শিশুটির কথা সবাই শুনতে পেল সবার ভুল ধারণা দূর হয়ে গেল সাথে সাথে জুরাইজের সত্যবাদিতা ও প্রকাশ পেল। এখানে উল্লেখ্য জুড়াই ছিলেন খুব উঁচু মাপের বুজুর্গ ।

মায়ের কারণে এমন পরিস্থিতির শিকার হলেও আল্লাহ তাকে অপদস্ত তার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। এক অভিনব পন্থায় ইতিহাসে যা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

সবকিছু প্রমাণ হবার পর রাজাও ভুল বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন আপনি যদি চান আপনার ভেঙে দেওয়া উপাসনালয়টি আমি স্বর্ণ তারা বানিয়ে দেবো ।

জুরাইজ বললেন না তার দরকার নেই রাজা পুনরায় বললেন তাহলে রুপা তারা বানিয়ে দিই। তিনি বললেন না তার দরকার নেই রাজা বললেন তবে আমরা সেটিকে কি করব। তিনি বললেন পূর্বে যেমনটি ছিল তেমনি করে দিন।

রাজা জিজ্ঞেস করলেন সর্বশেষ আপনার কাছে প্রশ্ন হলো আপনাকে যখন পাকড়াও করে আনা হচ্ছিল সেই মুহূর্তে আপনার মৃদু হাসির কারণ কি? তিনি বললেন মৃদু হাসির পেছনে একটা ঘটনা আছে যা আমার মনে পড়েছিল।

আর তা হলো আমার মা আমার জন্য বদ দোয়া করেছিলেন। আমার মায়ের অভিশাপে আমাকে স্পর্শ করেছে। অতঃপর তিনি সকল ঘটনা তাদেরকে খুলে বললেন। এই ঘটনাটি থেকে  দুটো শিক্ষা রয়েছে এক মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব

মাতা-পিতার  কাছে খুবই দ্রুত কবুল হয় সেটি প্রমাণিত হয়েছে। দুই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ইবাদত-বন্দেগিতে বিফলে যায় না সেটা প্রমাণিত হয়েছে।

বনী ইসরাইলের জুরাইজের আশ্চর্য ঘটনা সর্বশেষ

তাই আসুন পিতা-মাতার প্রতি সদয় হই। তাদেরকে কখনো কষ্ট না দেই । আর রবের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করি ।

বনী ইসরাইলের জুরাইজের আশ্চর্য ঘটনা শিক্ষা

১. নফল ইবাদতের চেয়ে পিতা-মাতার ডাকে সাড়া দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ন।

২. পিতা-মাতা বদ দোয়া করলে অনেক সময় পৃথিবীতেই তা প্রকাশ পেয়ে যায়। তাই পিতা-মাতার বদ দোয়া থেকে নিজেকে বাঁচতে হবে।

৩. এখানে জুরাইজের কোনো অপরাধ নেই। জুরাইজ নিজেকে সে নারীর ফাঁদে ফেলেনি । কিন্তু অসতী নারীর ফাঁদ, চক্রান্ত অনেক ভয়ানক। 

সে নারী নিজেই চক্রান্তের জাল বুনেছিল। জুরাইজ যদি আল্লাহর বিশেষ বান্দা না হতেন এবং সকলকে এমন অলৌকিক ঘটনা না দেখাতেন ।

তবে সবাই একজন ওলি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করত। সুতরাং নারীর ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে এবং আল্লাহর কাছে এর জন্য প্রার্থনা করতে হবে।

আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা আমাদেরকে তৌফিক দিন ।

পড়ুন: বনি ইসরাইলের তিন ব্যক্তি ও ফেরেস্তার ঘটনা

পড়ুন: বনি ইসরাইলের বাছুর পূজা করার ঘটনা

পড়ুন: বনি ইসরাইলের দুই জেলের কাহিনী

পড়ুন: বনি ইসরাইলের পাপিষ্ঠ এক যুবকের শিক্ষনীয় ঘটনা

BloginfoBD

আমি মোঃ সজিব মিয়া । কাজ করছি Bloginfobd, FST Bazar, FST IT , FST Telecom ওয়েবসাইটে ।


Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.