ভ্যাট ও আয়করের আওতা বৃদ্ধি: একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি ভ্যাট এবং আয়করের আওতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি
বর্তমানে দেশে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হচ্ছে রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎসগুলোর একটি। তবে এ খাতের সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি বলে মনে করছে এনবিআর। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সহজ এবং কার্যকর উপায়ে ভ্যাট নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য এনবিআর নতুন প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
এছাড়া, নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং কর প্রদান আরও সহজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পণ্য ও সেবার দামে স্বচ্ছতা আনার জন্য ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
আয়করের আওতা বৃদ্ধি
আয়করের ক্ষেত্রে এনবিআর আরও বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বর্তমান করদাতার সংখ্যা দেশে মোট জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। এনবিআরের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন করদাতা তৈরি করা।
এই লক্ষ্যে, করজালের আওতায় আসতে উৎসাহিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম কমাতে এনবিআর ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো
১. তথ্য বিশ্লেষণ:
এনবিআর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে সম্ভাব্য করদাতাদের শনাক্ত করছে। ব্যাংক লেনদেন, জমির রেজিস্ট্রেশন, গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় এবং উচ্চ-মূল্যের বিলাসবহুল পণ্য কেনাকাটার তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
২. নতুন করদাতার সংখ্যা বাড়ানো:
ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে নতুন করদাতা সংগ্রহের জন্য মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই উদ্যোগের আওতায় অপ্রচলিত করদাতাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি:
কর প্রদানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। করদাতাদের কাছে কর প্রদানকে দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
ভ্যাট ও আয়করের আওতা বৃদ্ধি করলে সরকারি রাজস্ব বাড়বে, যা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কর ফাঁকি দেওয়া এবং ভ্যাট প্রদানে অসচেতনতা বড় সমস্যা।
শেষ কথা
ভ্যাট ও আয়করের আওতা বৃদ্ধি বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করবে। সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারলে এই উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।