আমরা সকলেই জানি, মহানবী (সাঃ) ছিলেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তিনি ছিলেন দয়ালু, সহানুভূতিশীল, এবং সর্বোচ্চ নৈতিকতার অধিকারী।
তবুও, হাদিসে বর্ণিত আছে যে, কেয়ামতের দিন তিনি আল্লাহর কাছে কাঁদবেন।
সব মানুষ কীভাবে ইহকালের শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাবে এ চিন্তায় নিমগ্ন থেকেছেন তিনি। কখনও নির্ঘুমে কেটেছে পুরোটা রাত।
নামাজে কেঁদেছেন, দোয়ায় কেঁদেছেন, সারা রাত কেটে গেছে চোখের পানি ফেলে।
সে কান্নায় নিজের কোনো স্বার্থ ছিল না, শুধু উম্মতের স্বার্থে, তাদের ভালোবেসে কেঁদেছেন দিন-রাত, দোয়ায় হাত তুলেছেন বারবার।
এভাবে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পুরোটা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন উম্মতের ভালোবাসায়। যে ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম ও তুলনাহীন।
হাশরের ময়দানের কঠিন মুহূর্তেও তিনি ভালোবাসা ও ত্যাগের নজরানা দেবেন। সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন আর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলবেন ‘হে রব! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত!’ (মুসলিম : ৬০৯৮)
মহানবী (সাঃ) কেয়ামতের দিন কাঁদবেন:
হাদিসে বর্ণিত কয়েকটি কারণ রয়েছে যার জন্য মহানবী (সাঃ) কেয়ামতের দিন কাঁদবেন:
তার উম্মতের ভাগ্য:
মহানবী (সাঃ) তার উম্মতের ভালোবাসায় অপরিসীম ছিলেন। তিনি জানতেন যে, কেয়ামতের দিন অনেক মুসলিম বিচারে অসফল হবে। তাদের জন্য তিনি দুঃখিত হবেন এবং আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাইবেন।
জাহান্নামের ভয়াবহতা:
জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, মহানবী (সাঃ) তার উম্মতের অনেককে জাহান্নামে যাওয়ার শঙ্কা করবেন। তিনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রহমতের আবেদন করবেন।
আল্লাহর সান্নিধ্যের আকাঙ্ক্ষা:
মহানবী (সাঃ) জানতেন যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। তিনি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন এবং আল্লাহর কাছে তার রহমতের আবেদন করবেন।
হাশরের ভয়াবহ ময়দানে, যখন সকল মানুষ আল্লাহর বিচারের জন্য অপেক্ষা করবে, তখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রিয় উম্মতের জন্য অকল্পনীয় ভালোবাসা ও ত্যাগের পরিচয় দেবেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আকুতি করবেন:
“হে রব! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত!”
এই হৃদয়বিদারক বাক্যটিতে ধ্বনিত হয় একজন নবীর অসীম ভালোবাসা, যিনি তার উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের প্রার্থনা করবেন।
কঠিন মুহূর্তেও ত্যাগের পরিচয়:
হাশরের ময়দানে মানুষের উপর নানা বিপদ ও কষ্ট নেমে আসবে। তীব্র তাপ, প্রবল ক্ষুধা, পানির অভাব – এসবের মধ্যেও নবী (সাঃ) তার উম্মতের পাশে থাকবেন।
কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:
“তারা যখন তীব্র তাপে পৌঁছাবে, তখন তারা বলবে, ‘কাশ! আজ আমাদের জন্য একজন বিচারক থাকত! কাশ! আজ আমাদের জন্য একজন সাক্ষী থাকত!’” (সূরা আল-কুরআন, 78:49-50)
এই আয়াতে নবী (সাঃ) এর ভূমিকা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি হবেন বিচারক ও সাক্ষী, যিনি তার উম্মতের পক্ষে কথা বলবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন।
নবী (সাঃ) এর শাফায়াত:
হাশরের ময়দানে নবী (সাঃ) তার উম্মতের জন্য শাফায়াত করবেন। শাফায়াত হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের প্রার্থনা।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“আমি শাফায়াতের জন্য উঠে দাঁড়াব এবং বলব, ‘হে রব! আমার উম্মতকে আমার কাছে দিয়ে দিন।’”
এই শাফায়াতের মাধ্যমে নবী (সাঃ) তার উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন।
নবী (সাঃ) এর ভালোবাসা ও ত্যাগের অসীমতা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। হাশরের ময়দানে তিনি যে ভূমিকা পালন করবেন, তা আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নবী (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ করে।
আমাদের উচিত নবী (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা এবং তার শিক্ষার আলোকে আমাদের জীবনকে সাজিয়ে তোলা।
শিক্ষা:
মহানবী (সাঃ) কেয়ামতের দিন কাঁদবেন এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। আমাদের উচিত কেয়ামতের দিনের ভয়ানকতা সম্পর্কে সচেতন থাকা
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের জীবনকে সাজিয়ে তোলা।
উপসংহার:
মহানবী (সাঃ) ছিলেন একজন নিখুঁত মানুষ। তবুও, তিনি আল্লাহর প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধায় কাঁদতেন। আমাদের উচিত তাঁর অনুসরণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের জীবনকে সাজিয়ে তোলা।
১) হাশরের ময়দানে নবী (সাঃ) এর ভূমিকা:
- সহীহ বুখারি: ৬৩৪৫
- সহীহ মুসলিম: ৩৩৭০
২) নবী (সাঃ) এর শাফায়াত:
- সহীহ বুখারি: ৪৮৯৭
- সহীহ মুসলিম: ৩২৭৬
৩) বুখারি : ৪৭১২:
- সহীহ বুখারি: ৪৭১২
৪) মুসলিম : ৬০৯৮:
- সহীহ মুসলিম: ৬০৯৮