জীবনে কখনো মাথা ব্যথা হয়নি এমন কেউ কি আছেন? আমার মনে হয় না তবে মাথাব্যথার একটা বড় কারণ হচ্ছে মাইগ্রেন। আজকের পর্বে আমরা জানবো মাইগ্রেন কি? কেন হয় হলে কি করতে হবে এবং কিভাবে আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
মাইগ্রেন কি
মাইগ্রেন হচ্ছে মাথার একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তীব্র ধরনের ব্যথা। কখনো কখনো এই ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওইপাশের পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথার সাথে সাথে কখনো কখনো দৃষ্টিবিভ্রম বা বমি বমি ভাব থাকতে পারে।
মাইগ্রেন একটি সাধারণ রোগ। প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি ১৫ জন পুরুষের মধ্যে একজন মাইগ্রেনের ভুগে থাকেন।
সব মাইগ্রেন কি একই রকম?
মাইগ্রেন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । তবে মাইগ্রেন হওয়ার আগে আমাদের শরীর আমাদেরকে কিছু সতর্কবার্তা দেয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে চোখে হঠাৎ করে আলোর ঝলকানি দেখা তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের পূর্ব লক্ষণ থাকে না।
এ ধরনের মাইগ্রেন সবচেয়ে বেশি হয়। আবার আরেক ধরনের মাইগ্রেন আছে যাকে বলা হয় সাইলেন্ট মাইগ্রেন। এসব ক্ষেত্রে পূর্ব লক্ষণ থাকলেও কোনো মাথাব্যথা থাকেনা।
মাইগ্রেনের লক্ষণ
- মাইগ্রেনের উপসর্গ হচ্ছে
- মাথার যে কোন একপাশে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের ব্যথা।
- বমি বমি ভাব থাকতে পারে।
- ঘাম
- মনোযোগহীনতা
- অনেক বেশি ঠান্ডা
- অনেক বেশি গরম অনুভব করা,
- পেটে ব্যথা
- ডায়রিয়া
এগুলোর যেকোনো একটি যদি আপনি দেখতে পান এসব লক্ষণ আপনার মধ্যে আছে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাইগ্রেন কেন হয়
মাইগ্রেন সাধারণত কেন হয় সেটি সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে কিছু কারণ আছে যেগুলোকে মনে করা হয় যে এগুলো মাইগ্রেন হওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম যখন স্নায়ু ব্যবস্থা শরীরের রাসায়নিক উপাদান এবং রক্তনালীকে আক্রান্ত করে ফেলে তখন এই ধরনের তীব্র ব্যথা মাথার একপাশে অনুভূত হয় ।
আরেকটি কারণ হচ্ছে হরমোনজনিত পরিবর্তন । চিকিৎসকরা বলেন ঋতুস্রাবের সময় নারীরা বেশি মাইগ্রেন ভোগে। আবেগে নানা কারণ মাইগ্রেন এর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ,হঠাৎ পাওয়া আঘাত, উত্তেজনা ইত্যাদি নানা কারণ থাকে মাইগ্রেন পেছনে মাইগ্রেন হওয়াকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে যায় ।
আরও পড়ুন : কি খেলে লম্বা হওয়া যায় জেনে নিন বিস্তারিত
শারীরিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে মাইগ্রেন পেছনে এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঘুম কম হওয়া, শিফটে কাজ করা , বেশি ব্যায়াম করার পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে।
এছাড়া আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন পরিবেশগত কারণ আপনি যদি হঠাৎ করে গরম থেকে ঠান্ডা পরিবেশে বা ঠান্ডা থেকে গরম পরিবেশে যান সেক্ষেত্রে আপনি মাইগ্রেন ভুগতে পারেন । আপনি যদি হঠাৎ করে অনেক বেশি আলো রয়েছে এমন জায়গায় প্রবেশ করেন সেটি আপনার মাইগ্রেন তৈরি হওয়ার পেছনে কাজ করতে পারে ।
আমরা কি খাচ্ছে সেটি অনেক সময় মাইগ্রেন সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে। খাবার-দাবারের অনিয়ম করা, পানিশূন্যতার ভোগা, মদ্যপান করা, চা বা কফি বেশি খাওয়া এসব নানা ধরনের অনিয়ম হওয়ার মাইগ্রেন হওয়ার পেছনে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন ?
যদি ঘন ঘন তীব্রতর ভাবে মাথাব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ঘন ঘন মাথা ব্যথার সাথে যদি বমি হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার যদি মাইগ্রেন থাকে তাহলে উচ্চমাত্রার ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
কারণ মাইগ্রেনের চিকিৎসাকে অনেক বেশি কঠিন করে তোলে। এক মাসে যদি ৫ বারের বেশি মাইগ্রেনের ব্যথায় ভোগেন। তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।
আরও পড়ুন : মেয়েদের লম্বা হওয়ার উপায়গুলো জেনে নিন
আপনি যদি দুর্বলতা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে । কথা বলার সময় যদি সেটা অস্পষ্ট হয় বা কথা যদি ভেঙে যায় তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়া মাথাব্যথা সাথে যদি তীব্র জ্বর থাকে এর আগে হয়নি এমন তীব্র ধরনের মাথাব্যথা যদি হঠাৎ করে দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাইগ্রেনের সমস্যার ধাপ
জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা থাকে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায় শরীরের রেশ দেখা যায় তাহলে অবশ্যই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে । মাইগ্রেন কিন্তু একেবারে মাইগ্রেন বেশ কয়েকটি ধাপ থাকে।
তার মধ্যে প্রথমটি ধাপটি শুরু হওয়ার আগে বেশ কিছু লক্ষণ থাকে তার মধ্যে একটি হচ্ছে মেজাজ খিটখিটে হয়ে, শরীরে শক্তি না পাওয়া, আচরণগত এবং ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় ধাপে চোখে আলোর ঝলকানি দেখা বা একেবারে চোখে না দেখা এ ধরনের কিছু লক্ষণ থাকে ।
এই লক্ষণগুলো ৫ মিনিট থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তৃতীয় ধাপ হচ্ছে মাথাব্যথা পর্যায়ে। এ পর্যায়ে তীব্র মাথা ব্যথা থাকে সেই সাথে আরো কিছু লক্ষণ যেমন অসুস্থতা বোধ করা, বমি বমি ভাব এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে।
আরও পড়ুন : মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি বিস্তারিত ব্লগইনফো বিডি
চতুর্থ পর্যায় হচ্ছে রেজুলেশন ধাপ । এই ধাপে এসে মাথা ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তবে শরীরের দুর্বল লাগা তৈরি হয় এই ভাবটা বেশ কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে ।
মাইগ্রেনের চিকিৎসা কী ?
সহজ কথায় বলতে গেলে মাইগ্রেনের আসলে সে ধরনের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে থেকে নিয়ন্ত্রিত জীবন মাইগ্রেন কে এড়িয়ে চলতে অনেকাংশেই সাহায্য করে । বর্তমানের মাইগ্রেনের কোন প্রতিষেধক নেই । তবে এই রোগের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
সর্বশেষ
তবে চিকিৎসা সব বেশ সময় সাপেক্ষ । মাইগ্রেন থাকলে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে । তবে যে পর্যায়ে হোক যেই হোক মায়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও পড়ুন : কী খেলে আলসার ভাল হয়। ঘরোয়া প্রতিকার