মানসা মুসা ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠতম ধনী শাসক। আমরা যখন বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের কথা শুনি তখন প্রথমে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিল গেটস,ওয়ারেন বাফেট, কার্লোস স্লিম অথবা কিছু আগের রকেফেলার এবং রহস চেন পরিবারের চিত্র।
ধনবান ব্যক্তি বলতে আমরা এই লোকদেরকে কল্পনা করি। কিন্তু ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে একজন ব্যক্তিত্বের সকল কিছুকে ইতিহাসে স্থান দখল করে রেখেছেন।
তিনি হলেন মালির মুসলিম শাসক মানসা মুসা। মানসে শব্দের অর্থ রাজা পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের দশমাংশ ছিলেন। তিনি ১৩১২ থেকে ১৩৩৭ পর্যন্ত তিনি মালি সাম্রাজ্যের মানসে হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১২ সালে মার্কিন ওয়েবসাইট সেলিব্রেটির নেটওর্থ তালিকায় বিশ্বের ইতিহাসে শীর্ষ ধনীদের মধ্যে তাকে প্রথম স্থানে রাখে ।
এখানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি ডলারের সমমূল্য হওয়ার একটি ধারণা দেয়া হয়। মানসা মুসার সমকালীন মালি সাম্রাজ্য ছিল আজকের মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি, বুরকিনা ফাসো, মালি নায়িকার, নাইজেরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
১২৩০ সালে মাসুন্দিয়া তোকে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। আফ্রিকার পশ্চিম আটলান্টিক সাগরের তীর থেকে পূর্বে চাঁদ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মাইলের ভূখণ্ড এই সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে স্বর্ণ,লবণে পরিপূর্ণ। ব্রিটিশ মিউজিয়াম এর মধ্যে তৎকালীন বিশ্বের মোট মজুদ সম্পদের এর অধের্ক ছিল এই সাম্রাজ্যের।
কিন্তু বিশাল সাম্রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ থাকলে বহির্বিশ্বে তার কোনো পরিচিতি ছিল না। মানসা মুসার হজযাত্রা মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়।
১৩২৪ সালে মানসম্মত মক্কার হজ যাত্রার মাধ্যমে ঐতিহাসিকদের নজরে আসেন। মক্কায় হজ যাত্রার পথে প্রতিদিন দরিদ্রদের অর্থ বিতরণ এবং পথে পথে প্রতি শুক্রবার তিনি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
তার যাত্রাপথে তিনি এত বেশি সম্পদ দান করেন যে দশ বছর পর্যন্ত মিশরের স্বর্ণের মূল্য কম ছিল।
কারণ বাসিন্দাদের মনের মানুষ এতোটাই স্থান দখল করে রেখেছিলেন জেলার ভ্রমণের ১২ বছর পরে ঐতিহাসিকরা সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তার প্রশংসা শুনতে পান।
প্রাথমিক জীবন
বারোশো আশি সালের মালির পরিবারে মানসম্মত জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার নাম ছিল মুসাকে কিন্তু ইতিহাসে তিনি মানসম্মত হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।
তার দাদা আবুবকর কে ছিলেন প্রথম মানুষের চন্দিয়া থেকেই তার ভাই কিন্তু তিনি কখনোই সিংহাসনে আরোহন করেন নি। তার ছেলেও মানসা মুসার পিতা ফালাইয়া কখনোই শাসন ক্ষমতায় ছিলেন না ।
শাসন ক্ষমতা পরিচালনায় মানসাকে তার পরিবারের সদস্য হিসেবে সহায়তা করতেন।মুসা মানসা হওয়ার পূর্বে শাসন পরিচালনায় সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
তেরোশো বারো সালের মানসা মুসার পূর্ববর্তী শাসকদের দ্বিতীয় আবু বক্কর তার হাতে শাসন ক্ষমতা দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের শেষ সীমানা পাড়ি দেওয়ার জন্য সমুদ্রযাত্রা বেরিয়ে পড়েন। তিনি আর কখনোই ফিরে আসেননি।
ইসলাম প্রচারে সহায়তা
মানসা মূসা ইসলাম প্রচারেও সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি একজন মুসলিম ছিলেন এবং কুর’আনের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে অনেকগুলো বিদ্যালয় নির্মাণ করেন।
তিনি উত্তর আফ্রিকার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী প্রেরণ করতেন।
মক্কায় হজ যাত্রা
ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে শাসন ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকেই মানসা মুসা মক্কায় হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সকল প্রস্তুতির পর ১৩২৪ সালে তিনি হজের জন্য মক্কায় রওনা করেন ।
মক্কার হজ্বের জন্য এই যাত্রায় মোট ৬০ হাজারের মতো লোক তার সফরসঙ্গী হিসেবে যাত্রা করে। মনসা যাত্রা শুধু ৮০ টির মত যার একটি বহর ছিল। যেগুলো ৩০০পাউন্ড করে সমান বহন করছিল ।
মানসা দাঁড়িয়ে যাত্রায় মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া এবং কায়রো শহরে যাত্রাবিরতি করেছিলেন। এক সময় তিনি এত সদকা করেন যে ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেন যে মিশরের অর্থনীতিতে অস্বাভাবিকতা তৈরি হয় এবং১০ বছর পর্যন্ত এই অবস্থা বিরাজ করছিল ।
তাছাড়া মক্কায় তারি হজ যাত্রার পথে তিনি শুক্রবার বিভিন্ন শহরে একটি করে মসজিদ নির্মাণ করতেন। মানসা মুসার মক্কায় হজ যাত্রা তাকে আক্ষরিক অর্থে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছিল।
পরবর্তী কয়েক দশকে আরব এবং ইউরোপীয় মানচিত্র আফ্রিকার যত মানচিত্র তৈরি করেছেন তার সবগুলোতে মানুষের ছবির জন্য একটি স্থান বরাদ্দ ছিল।
১৩৭৫ সালে ইতালির বিখ্যাত কাতারের মানচিত্রে পশ্চিম আফ্রিকার কিম্বা কোটির উপরে শরণার্থী দণ্ড হাতে মানসা মুসা কে সিংহাসনে বসে থাকার চিত্র অঙ্কিত হয়।
মানসা মুসার হজযাত্রার প্রভাব
হজ থেকে ফেরার পথে মানসা মুসার সাথে আরো বহু মিশর থেকে অনেক আলেম প্রশাসনিক কাজে দক্ষ ব্যক্তি এবং স্থপতিদের নিয়ে আসেন।
তাদের সহায়তায় তিনি মালিকে আফ্রিকার এক সমৃদ্ধতম সম্রাজ্য পরিণত করেন । বর্তমানে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গাও অতিভক্তির ঐতিহাসিক স্থানসমূহ তার সময় নির্মাণ করা হয়।
মানসা মুসার শাসনকালে টিম্বুক্তু এক সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হয়। সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা এবং অন্যান্য কারণে ইউরোপ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসতো।
১৩৩৭ মানসা মুসা মৃত্যুর পর তার ছেলে প্রথম মাঘান শাসন ক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ পরবর্তী শাসকদের অযোগ্যতা ও বহিঃশক্তির আক্রমণের সমৃদ্ধশালী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।