মানসিক চাপ কমানোর উপায়: মানসিক সুস্থতা এবং মানসিক চাপ অনেক সময় কর্ম এবং ব্যক্তি জীবনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। দেখা যায় আমরা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজ গুলো ঠিকভাবে করে উঠতে পারি না।
মানসিক চাপ কমানোর উপায়
অনেক মানসিক অবসাদ বিষণ্ণতায় ভোগে থাকি । এমন পরিস্থিতিতে মানসিক সুস্থতা এবং মানসিক চাপ বেশী চলে আসে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। যা পরবর্তীতে আমাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হবার ঝুঁকি বাড়ায় ।
শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমাদের সামগ্রিক সুস্থতা তা নিশ্চিত করতে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি ও সমানভাবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কি করে বুঝবো যে আমরা খুব বেশি মানসিক চাপে আছে কিনা। কিছু শারীরিক লক্ষণ এবং মানসিক লক্ষণ এর মধ্যে জানা যায় যেমন
- মাথা ব্যাথা অনুভূত হওয়া ।
- শরীরে ব্যথা বেদনা অনুভব করতে পারি ।
- ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়া ।
- বিরক্ত বোধ করা ।
- দ্রুত রেগে যাওয়া ।
- স্বাভাবিকের থেকে খুব বেশি উদ্বেগে থাকা ।
- কোনো কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয় ।
- সব সময় চিন্তার বিষয় নিয়ে ভাবা ।
মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থতার আপনি আমরা যে নিলাম এবার আসি কিভাবে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি সে বিষয়ে কিছু জানব।
পর্যাপ্ত ঘুম
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনেক বেশি প্রভাবশালী দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত । তাহলে আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে পারেন।
লাইফ স্টাইল বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যারা রাত জাগে এবং কম ঘুমায় তাদের ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি থাকে । ১৭ থেকে ২০ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো।
পড়ুন : ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত । ঘুমের আগে ১০ টি কাজ করুন
ব্যায়াম করা
আপনার মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরী। সক্রিয় রাখতে ব্যায়াম করা অপরিহার্য আমি প্রতিদিন ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর মাধ্যমে ব্যায়াম করতে পারি। এছাড়া দড়ি লাফ খেলা, সাঁতার কাটা, করতে পারেন এতে আমরা শরীরকে ও মানসিকভাবে নিজেদেরকে ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে রুটিন মেনে চলে
শুধু আমাদের কাজের চাপ কমে তাহলে এটা আমাদের দুশ্চিন্তা কমায় জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে এমন সাফল্যের পথ দেখায় । এতে মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। জীবনে রুটিন মেনে চলার কারণে আমরা সর্বোপরি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারি । আবার রুটিন মেনে না চলার কারণ নিয়ম প্রতিদিন পৃথিবীতে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ইতিবাচক চিন্তা করা
ইতিবাচক চিন্তা হচ্ছে এমন একটি মানসিক মনোভাব ধারণ করা যার জন্য আমরা প্রতিদিন কাজের ভালো এবং সন্তোষজনক ফলাফল আশা করি। অন্যভাবে বলতে গেলে ইতিবাচক চিন্তা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আশাহত না হয়েও ঠান্ডা মাথায় পরিবেশকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করা যেতে পারে ।
জীবন সুস্থ ও সুন্দর করার জন্য ইতিবাচক চিন্তার কোনো বিকল্প নেই। নিজের সাথে খারাপ কিছু ঘটতে থাকলে মোটেও ঘাবরন যাবে না অপেক্ষা করতে হবে নিজেকে সময় দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তার তৈরি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ কমানোর উপায় এর জন্য ইতিবাচক মানুষের সাথে চলাফেরা করা যেতে পারে। এমন মানুষদের সাথে মেলামেশা করা যেতে পারে যারা আমাদের ঘটনা মূলক কাজ এবং আশাবাদী হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ইতিবাচক চিন্তার মানুষদের সঙ্গে পরিহার করা উচিত ।
লক্ষ্য প্রত্যাশা স্থির করা
লক্ষ বা প্রত্যাশা হলো মানসিক ভাবে কোন কিছু পাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থির ভাবে গ্রহন করা ।আমরা মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখতে কল্পনার জগতে থাকতে পছন্দ করি । ভাবে আমি যদি ধনী হতাম ক্ষমতাবান হতাম দামি গাড়ি-বাড়ির মালিক হতাম আরো কত কি এগুলো স্বপ্নেও কল্পনা ।
কিন্তু যখনই আমরা এগুলো থেকে নির্দিষ্ট করে কোন কিছুকে পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি সেটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হাসিল করা । যেমন স্বপ্ন বা কল্পনা হল আমি যদি ধনী হতাম লক্ষ বা প্রত্যাশা স্থির করা হলো আমি সেমিস্টার পরীক্ষা প্রথম স্থান অধিকার করব।
অন্যকে সাহায্য করা
অন্যকে সাহায্য করলে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয় নিজের প্রতি আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে । এর ফলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। যেমন পরিবারের গুরুত্বপুর্ন কাজে সাহায্য করা ।
পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে কিভাবে সুস্থ করা যায় তার ব্যবস্থা করা। আমরা প্রতি সপ্তাহে একজন এতিম বাচ্চাকে খাওয়াতে পারি । বৃদ্ধকে রাস্তা পার করে দিতে পারি । পথশিশুদের জন্য বন্ধুবান্ধবরা মিলে সপ্তাহে একদিন করে ওদের পড়াতে পারি ।
নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া
জীবনে অনেকটা সময় কেটে যায় অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের ভালো-মন্দ নিয়ে । কখন সম্পর্ক ভাঙ্গে আবার কখনো চেষ্টা করে সম্পর্ক জোড়া লাগে ঠিকই । কিন্তু এই সময় অনেককে শক্তি ক্ষয় হয় । আর এভাবে আস্তে আস্তে নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা যত খারাপ হয় তাতেই হতাশা ডিপ্রেশন চেপে বসে মনের মধ্যে।
মানসিক চাপ কমানোর উপায় সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বা বাইরে বের হওয়ার সময় কেমন পোশাক বা সাজে নিজেকে দেখতে ভালো লাগে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তেমনটা সেজে ফেলা ।
বর্তমানকে প্রধান্য দেয়া
তমার চান্স বলেন দুশ্চিন্তার স্বাধীনতা ভবিষ্যৎ ভিত্তিক মনের অবস্থা। তাই ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে চিন্তা না করে বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারি আমার বর্তমান অবস্থা কি? আমি কি ঠিক আছে? কোন কাজটি আমার এখন করা দরকার? যদি এতেও কাজ না হয় পরবর্তীতে নিজের সাথে পুনরায় কথা বলে নেয়া।
পছন্দের কাজগুলো করা
হয়তো ছোটবেলায় গান বা ছবি আঁকা শেখা হয়েছে। বড় হওয়ার পর কাজের চাপে বা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঝামেলার কারণে এগুলো করা হয়ে উঠে না । আমাদের ভালোলাগার কাজগুলো প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে।
মানসিক চাপ কমানোর উপায় যেমন নিজের ভাললাগার জন্য ছবি আঁকা, আবৃতি, বই পড়া, নাচ, বাগান করা ইত্যাদি যা আমাদের নিজেদেরকে মানসিকভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
ডায়েরি লেখা
আমাদের মনের অনেক কথা আমাদের পাশে থাকা প্রিয়জনদের বলতে পারি না । বলতে চায় না তবে আমরা কিন্তু একটি বিশেষ উপায়ে এর মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে পারি আমরা হয়তো কেউ কেউ কখনো ডাইরি লেখার কাজটি করতে চাই না বা করিনা ।
কিন্তু আমরা যদি এই ডাইরি লেখার নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে তাহলে কেমন হয় এর মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের জমে থাকা যত রাগ, অনুশোচনা, তিক্ততা , জড়তা ইত্যাদি দূর করতে পারি । যেমন আমাদের খুব কাছের মানুষের সাথে যদি আমাদের মনোমালিন্য হয় তাহলে আমরা কেন রাগ হয়েছি বা তার কতটুকু দোষ ছিল সেটাই তিনি লিখতে পারি।
তাহলে আমাদের মানসিক চাপ কিছুটা হলেও দূর হতে পারে। পৃথিবীতে চলতে গিয়ে আমাদের জীবনকে বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। কখনও আমরা আনন্দে থাকে আবার কখনো দেখা যায় পরক্ষণই কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের উপর হতাশা দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণায় প্রভৃতি অনুভূতি কাজ করতে পারে ।
মানসিক চাপ কমানোর উপায় সর্বশেষ
এসব পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন হয় এমন কোন দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা আমাদের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত আনন্দময় করে উপস্থাপন করতে পারি । এতক্ষণ ধরে সেগুলো বলা হলো আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে ।
মানসিক চাপ কমানোর উপায় যা করে আমরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি । সর্বোপরি নিজেকে ভালোবাসি ভালো রাখি এবং অন্যকে ভালো থাকতে সাহায্য করি সচেতন থাকুন সুস্থ থাকুন ।
Very Important for us