মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা আছে। আজকের এই পোষ্টে আমরা জানবো মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা গুলো কি কি? তাহলে পোষ্টটি পড়তে থাকুন। এ বিষয়টি পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবেন।
আমাদের দেহের যেমন রোগ হয় তেমনি আমাদের মনের নানারকম সমস্যা হতে পারে । আমাদের দেহে রোগ হলে আমরা পরিবারের লোকজনের সাথে শেয়ার করি ও ডাক্তারের পরামর্শ নিন । কিন্তু মনের সমস্যা হলে আমরা কেমন জানি সংকুচিত হয়ে যায় ।
কিন্তু কেন একটা কথা মনে রাখবেন এই পৃথিবীর চারজনের মধ্যে একজন তাদের জীবন দশা যেকোনো সময় মানসিক বা স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মানুষ এই পরিস্থিতিতে ভুগছেন।
আরও পড়ুন: কিডনির কাজ । কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মানসিক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও আক্রান্ত রোগীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ কখনো ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে যান না। কারন মানসিক রোগ কে অনেকে রোগ হিসেবে স্বীকার করতে চান না। কিন্তু মানসিক অসুস্থতা আসলে একটি রোগ।
বাচ্চাদের মানসিক রোগ হয় না
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের প্রথম ভুল ধারণা হলো বাচ্চাদের মানসিক রোগ হয় না। অনেক মানুষ ভাবেন যে বাচ্চাদের মানসিক সমস্যা হয় না। অথচ আনুমানিকভাবে ফিফটি পার্সেন্ট মানসিক অসুস্থতা ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের শুরু হয়।
যদিও তাদের অসুস্থতা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায় । মানসিক অসুস্থতা যে কারো যে কোনো বয়সে হতে পারে।
পাপের কারণে মানসিক অসুস্থতা হয়
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের দ্বিতীয় ভুল ধারণা হলো পাপের কারণে মানসিক অসুস্থতা হয় । মানসিক অসুস্থতা কোন মানুষের পাপ এর ফলে মানসিক অসুস্থতা যে কারো হতে পারে। তার সঙ্গে তার বয়স কত তার লিঙ্গ কি দেশে কোন গোষ্ঠী বা জাতির তা নির্ভর করে না মানসিক অসুস্থতার জন্য অপরাধবোধ বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই ।
এটা বলা হয়ে থাকে যে কারো মানসিক অসুস্থতা তার ব্যক্তিগত দুর্বলতা ফল মানসিক রোগীকে এইরকম অপবাদ দেয়া হলে তাদেরকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে ।
রোগীকে দোষ না দিয়ে সঠিক কারণ খোঁজা উচিত যেমন মানসিক রোগের পেছনে জেনেটিক ব্যাপার আছে কিনা। জীবনে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আছে কিনা । নেশা বা ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা ।
মানসিক অসুস্থতার জন্য পিতা-মাতা দায়ী
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের তৃতীয় ভুল ধারণা হলো মানসিক অসুস্থতার জন্য পিতা-মাতা দায়ী। যখন কোনো শিশুর মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে অনেকে এর জন্য তার পিতা-মাতাকে দোষী ভাবে।
কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা মানসিকভাবে অসুস্থ শিশুকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস তার পরিবার। তার পরিবারের লোকজন প্রথমে শিশুর অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করে তবে পরিবারের মধ্যে কোন ট্রমা যেমন কারো মৃত্যু বা কারো বিচ্ছেদ হলে তা কিন্তু শিশুর মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে ।
মানসিক রোগ প্রতিরোধ করা যায় না
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের চতুর্থ ভুল ধারণা হলো মানসিক রোগ প্রতিরোধ করা যায় না । আমরা দিন দিন যত যন্ত্রনির্ভর হচ্ছি তার সাথে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীতে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানসিক রোগের প্রতিরোধ করার অসংখ্য উপায় আছে।
মানসিক সমস্যার প্রতিরোধের একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। কোনো রকম মানসিক সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখা ।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ । Symptoms of Dengue Fever
ৎআর স্বাস্থ্যসম্মত লাইফটা নিয়ে চলা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হেলদি ডায়েট মানসিক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের পঞ্চম ভুল ধারণা হলো মানসিক রোগীরা আগ্রাসী ও হিংস্র হয়ে থাকে।
মেন্টাল হেলথ অর্গানাইজেশন এর মত অনুযায়ী ৯৫ শতাংশ ভয়ানক অপরাধ করে থাকে মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ। তাই মানসিক রোগী বলতেই হিংস ও আগ্রাসী হয়ে থাকে এটা সম্পন্ন একটি ভুল ধারণা। তবে একেবারে উন্মাদদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিন্তু আলাদা অধিকাংশ মানসিক রোগী কখনো হিংস্র আচরণ করে না ।
মানসিক সমস্যা গোপন রাখা
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের ষষ্ঠ ধারণা হলো মানসিক সমস্যা গোপন রাখা উচিত। মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে অনেক মানুষের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাই অনেক মানসিক রোগী ভাবেন যে তাদের অবস্থা গোপন রাখা টাই সবচেয়ে বেশি ভালো হবে।
আমাদের নেগেটিভ ধারণা দূর করার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং সবাইকে বোঝাতে হবে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে তার আত্মমর্যাদা কোন সম্পর্ক নেই । মানসিক সমস্যার লজ্জার কোনো বিষয় নয় এ সমস্যা গোপন না রেখে বরঞ্চ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
আরও পড়ুন: কী খেলে আলসার ভাল হয়। ঘরোয়া প্রতিকার
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের সপ্তম ধারণা হলো মানসিক রোগ চিকিৎসা দ্বারা ভালো হয় না । কিছু লোক ধারণা করেন যে মানসিক রোগের চিকিৎসা ভালো হয় না কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসা অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকর ও ফলদায়ক।
বিশেষ করে অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা আরম্ভ হলে মানসিক রোগের চিকিৎসার অনেক পদ্ধতি আছে যেমন ওষুধ, কাউন্সেলিং ইত্যাদি সবই করবে।
আমার পরিচিত কোনো মানসিক রোগী নেই
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের অষ্টম ভুল ধারণা হলো আমার পরিচিত কোনো মানসিক রোগী নেই। মানসিক অসুস্থতা আপনার ধারণার চেয়ে বেশি কমন এবং আপনার অজ্ঞাতেই আপনার পরিচিত কেউ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় এবং আত্মহত্যা করে প্রমাণ করে যে মানসিক সমস্যা কে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
মানসিক রোগ না ভন্ডামি।
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের নবম ভুল ধারণা হলো এটা মানসিক রোগ না ভন্ডামি। যেহেতু মানসিক অসুস্থতার প্রতি বাইরে থেকে দেখা যায় না অনেক লোক মানসিক রোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এটি শুধুমাত্র একটি ভুল ধারণা নয় এটি প্রকৃতপক্ষে মানসিক রোগে ভোগা মানুষদের জন্য অপমান করা ।
মানসিক অসুস্থতা প্রকৃতপক্ষে একটি রোগ বা ডিজঅর্ডার যার গুরুত্ব সহকারে যত্ন নেওয়া উচিত। এই সমস্যায় আক্রান্ত লোকেরা অভিনয় করছে বা ভান করছে এরকম বোঝানো মানসিক রোগীকে আরও বেশি লজ্জিত করে ।
আরও পড়ুন: আমি মোটা হবো কিভাবে-মোটা হওয়ার সহজ উপায়
সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন ও সহযোগিতা করুন এটা বিশ্বাস করুন দেহে রোগ হতে পারে তেমনি মনের রোগ হতে পারে। আমরা সবকিছু জানি না তাই আগে থেকে বিচারক না হয় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন ।
বেশি অসুস্থ না হলে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই
মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের শেষ ভুল ধারণা হলো খুব বেশি অসুস্থ না হলে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই । মানসিক রোগে আক্রান্ত লোকেরা ও তার পরিবারের লোকেরা একটি বিষয় কনফিউজ থাকে যে কখন চিকিৎসা শুরু করা উচিত
অনেকে ভাবেন যে মানসিক অসুস্থতা খুব গুরুতর না হলে চিকিৎসা প্রয়োজন নেই ।এটি সম্পূর্ণভাবে একটি ভুল ধারণা আপনি যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করবেন তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে মারাত্মক পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং অসুস্থতা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
সর্বশেষ
একটি ছোট্ট অনুরোধ মানসিক রোগীকে ও মানসিক রোগ কে কোন ছোট করে দেখবেন না। আমাদের দেহে রোগ হতে পারে তেমনি আমাদের মনের রোগ হতে পারে। সবশেষে আপনার ছোট্ট অনুরোধ যদি এই পোষ্টটি ভাল লাগে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানান। আমাদের সঙ্গে থাকুন ভালো থাকুন ।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায়-How To Increase Brain Power