আসসালামু আলােইকুম রহমাতুল্লাহ ব্লগইনফো বিডির পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। রমজান মাসের বিশেষ ৯টি আমল। আল্লাহর ক্ষমার মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনে বারবার ঘুরে ফিরে আসে।
রমজান মাসের বিশেষ ৯টি আমল
রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। মুমিনের জন্য এটি কল্যাণ ও বরকতের বসন্তকাল । তাই একজন মুমিন রমজানের পুরো মাস কাজে লাগাতে পারে।
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ৯ বিশেষ আমল এই পেষ্টে উল্লেখ করা হলো।
১। তাহাজ্জুদ ও দোয়া : (সুরা সিজদাহ, আয়াত : ১৬)
সাহরীর আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে বিভিন্ন ইবাদত করা যায় । এসময় তাহাজ্জুদ ও দোয়ার আমল করা সহজ ।
আল্লাহ তায়ালা মুমিনের গুণাবলী উল্লেখ করে বলেন ”তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের রবকে আশায় ও ভয় নিয়ে ডাকে এবং আমি তাদের যা দেয় তা থেকে তারা ব্যয় করে” (সূরা সিজদাহ আয়াত ১৬) ।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন রমজান মাসের পর সর্বোত্তম মাস মহরম। ফরজ নামাজের পর সবোর্উত্তম নামাজ তাহাজ্জুদ।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রমজানের ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাতের নামাজ আদায় করবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে।( সহি বুখারি হাদিস নং৩৭)
২। সাহরি গ্রহণে বরকত :
সাহেরি খাওয়া সুন্নত রাসুল সাঃ রোজাদারকে সেহরি খেতে বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন কেননা সেহরিতে বরকত আছে( সহিঃ মুসলিম হাদিস নং ১০৯৫)।
সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব তবে এত দেরি করা যাবে না যে সুবহে সাদিকের আশংকা হয়।
৩। জামাতে নামাজ আদায়ে বহু গুণ সওয়াব : (বুখারি, হাদিস নং : ৬৪৫)
আযানের আগে থেকে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। বাসায় অজু করে মসজিদে যাবেন। মসজিদে প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত।
আযান দেওয়ার আগ পর্যন্ত দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির করার সুযোগ থাকে। আজানের সময় আযানের জবাব দেওয়া সুন্নত। এর পর সুন্নত নামাজ আদায় করবে।
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন একাকী নামায আদায়ের চেয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের ২৭ গুণ বেশি সওয়াব।( সহি বুখারি হাদিস নং ৬৪৫)
এরপর জামাতের আগ পর্যন্ত জিকির দোয়া কোরআন তেলাওয়াতে মনোনিবেশ করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন নামাজের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তি নামাজে আছেন তথা নামাজে থাকার সোয়াব পাবেন।( হাদিস নং ৬৪)
৪। ইশরাকের নামাজ আদায় : (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ১৩২০)
রমজানের সূর্যোদয়ের অনেক আগেই ফজরের জামাত হয়। তাই জামাত এর পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় থাকে। এ সময় না ঘুমিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা যায়।
তাছাড়া দিনের শুরুর আগে নিরি বিলি পরিবেশে মন প্রশান্ত থাকে। সূর্যোদয়ের তেইশ মিনিট পর ইশরাকের নামাজ পড়া সুন্নত। রাসুল সাঃ দিনের শুরুর অংশের জন্য দোয়া করেছেন।
আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন হে আল্লাহ আপনি আমার উম্মতকে দিনের শুরুতে বরকত দান করুন ।(আহমদ হাদিস নং ১৩২০)
৫। ইফতার করালে রোজার সওয়াব : (তিরমিজি, হাদিস নং : ৮০৭)
রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করা বড় পূণ্যের কাজ। রমজান মাসের কারণে এদের স্বভাব। অনেকবৃদ্ধি পায় আল্লাহতালা জান্নাতীদের গুণাবলী বর্ণনা করেন।
এভাবে খাবারের প্রতি আসক্তি থাকা সত্বেও অভাবে এতিম ও বন্দিকে আহার করা । (সূরার দাহার আয়াত ৮) ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে অনুরূপভাবে সওয়াব পাবে । রোজাদারের সবথেকে কোন অংশ কমানো হবে না । তিরমিজি হাদিস নং ৮০৭ ।
৬। দানের বহু গুণ প্রতিদান : (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৬)
দান করা সব সময় পুণ্যের কাজ আর রমজানের অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা বেশি দান করতেন। আর রমজানের দানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তা আরও বেড়ে যেত।
এ সময় জিবরাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজানের প্রতিরাতে জিবরাঈল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কুরআন পাঠ করতেন।
এ সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ৬)
৭। কোরআনের সুপারিশ : (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৬৫৮৯)
রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াতের মাস। এই মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন রোযা ও কুরআন মানুষের জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।
রোজা বলবে হে আমার রব আমি তাকে খাবারও প্রবৃত্তি পূরণে বাধা দিয়েছি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন ।
আর কুরআন বলবে আমি থাকে রাতের বেলা ঘুমাতে বাধা দিয়েছি অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৬৫৮৯)
৮। ওমরা আদায়ে হজের সওয়াব : (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ১৬৯০)
রমজান মাসে ওমরা আদায় অনেক সওয়াব। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারী নারীকে বলেন আমার সঙ্গী তুমি হজ পালন করছো না কেন?
ওই নারী বলেন আমাদের উটে করে আমার স্বামীও ছেড়ে চলে গেছে । আরেক উটে আমরা যাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন রমজান মাসে তুমি ওমরা পালন করবে। কারণ রমজানে ওমরা পালন হজের সমতুল্য। সহি বুখারি হাদিস নং ১৬৯০
৯। পাপ ও পরনিন্দা পরিহার : (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ১৮০৪)
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা পরিহার করবে না তার পানাহার পরিহার করা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।( সহি বুখারি হাদিস নং ১৮০৪)
রমজান মাসের বিশেষ ৯টি আমল সর্বশেষ
মহান আল্লাহতালা আমাদেরকে পেষ্টে বর্ণিত আমলগুলো করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমি আপনি যদি এরকম পোষ্ট নিয়মিত পেতে চান তাহলে নিয়মিত সাইটে ভিজিত করুন ।