হযরত ওমর রাঃ এর শাসন আমল হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর যতটা পরিচিত ছিলেন তার কোমল নম্র ব্যবহারের জন্য।
ঠিক ততটাই লোকে ভয় পেত হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে তার বজ্রকঠিন ব্যক্তিত্বের জন্য।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মৃত্যুর পর তিনি মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বগুণের ইসলাম অনেক দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস নাটকীয় মৃত্যু তাকে বরণ করে নিতে হয় পারস্যের এক আততায়ীর হাতে। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট খলিফা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু।
তার আগের দিন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইন্তেকাল করেছিলেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার শাসনে খুবই ন্যায় পরায়ন ছিলেন ।
তাছাড়া ইসলামের প্রাথমিক যুগে থেকেই তার উপাধি ছিল ফারুক । শাসনের শুরুতে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কিন্তু খুব বেশি জনপ্রিয় ছিলেন না মদিনার গণ্যমান্য সাহাবীদের মাঝে কারণটা ছিল তার রাগি স্বভাব।
কিন্তু এই কাঠিন্যতাকে সাহায্য করে আইন-শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখতে। খুব অল্প সময়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জনগণের ভালোবাসা পেয়ে যান।
শাসন নিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সাথে একটু মনোমালিন্য ছিলনা তা নয় এজন্য তিনি খায়বার অঞ্চলের বিতর্কিত জমির আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে দিয়ে দেন ।
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময় যে রিদ্দার যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধ থেকে হাজার হাজার বেদুইন যুদ্ধবন্দী পাওয়া গিয়েছিল।
তাদের সকলকে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে মুক্ত করে দেন এতে বেদুইন গোত্রগুলোর মাছের হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়।
পুরো সাম্রাজ্যকে নিয়মের মাঝে নিয়ে আসতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রদেশগুলোকে অনেকগুলো জেলাতে ভাগ করেন।
প্রদেশগুলোর শাসক ছিলেন তিনিও করে দেওয়া একেকজন গভর্নর বাহুয়ালী প্রায় এক শত জেলা বা প্রধান শহর ছিল সাম্রাজ্যঃ জুড়ে যেগুলোর দায়িত্বে থাকবেন অপেক্ষাকৃত জুনিয়র গভর্নর আমীরগণ ।
৬৩৪ সালে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে হারানোর জায়গাগুলো উদ্ধার করতে আক্রমণ চালান । কিন্তু ইয়ারমুক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর কাছে বাজেভাবে হেরে যান তিনি ।
ঘটনাপ্রবাহে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার আদেশে সাহাবী আবু ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জেরুজালেম অধিকার করার জন্য এগিয়ে যান মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে।
সামনে সামনে ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। নভেম্বরে জেরুসালেমে পৌঁছলেন বাহিনী ৬ মাস অবরোধ করে রাখার পর নগর কর্তা শফীকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হন ।
তবে শর্ত একটাই হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নিজে আসতে হবে তার হাতেই অর্পণ করবেন। সফর নিয়ে আজ অবাক বিস্ময় দেখলেন কোন জাঁকজমক ছাড়াই হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার দাসার গাধা নিয়ে জেরুজালেমে এসেছেন।
তিনি ঘুরিয়ে দেখালেন পবিত্র শহরটি যখন নামাযের সময় হল তখন তাকে চার্জে আহ্বান করলেন কিন্তু ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু না বললেন।
তিনি জানালেন এখন যদি তিনি এ চার্চে নামাজ আদায় করেন তাহলে পরে মুসলিম এই চার্চ ভেঙ্গে মসজিদ বানিয়ে ফেলবে।
এতে খ্রিস্টানরা তাদের পবিত্র স্থান হারাবে। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এখানে কোন জবরদস্তি করানো থেকে বিরত করলেন।
এ কারণে যে এটা সেই জায়গা যেখানে খ্রিষ্টানরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। আরে এইখানের গুহাতে তার দেহ রাখা হয়েছিল ।
উল্লেখ্য সেই চার্জ এখনও আছে নাম হল ইহুদীদের জন্যও জেরুজালেম খুব পবিত্র জায়গা। খ্রিস্টান অধিকার থেকে মুক্ত করে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর স্থানে ইহুদিদের পূনর্বাসনের জায়গা করে দেন।
ইহুদি পরিবার এখানে চলে আসে। জেরুজালেমের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা থেকে খ্রিস্টান ইহুদীদের অপমান করবার জন্য ময়লা ফেলার জায়গা করে রেখেছিল।
ইহুদি থেকে ধর্মান্তরিত হওয়া সাহাবীর পরামর্শে সেখানে তিনি মসজিদ নির্মাণ করেন যার নাম হয় মসজিদুল আকসা । হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর শাসন আমলে দ্রুতহারে ইসলামী সাম্রাজ্য প্রসারিত হতে থাকে।
তিনি আদমশুমারি করে জনসংখ্যা গণনা করেন । ৬৩৮ সালে তিনি একই সাথে মক্কা মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববী বড় করে তোলেন । তিনি নজরানার খায়বারের ইহুদি ও খ্রিস্টান গোত্রগুলোকে সিরিয়ার ইরাকে অবস্থান দেন।
৬৩৮ সালে তিনি ঘোষণা করলেন তখন থেকে ইসলামিক পঞ্জিকা হিসেবে সাল গণনা শুরু হবে এবং সেটা হবে হিজরতের বছরকে প্রথম বছর ধরে। সে হিসেবে সেটা ছিল হিজরী ১৭ সাল ৬৪১ সালে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বায়তুলমাল গঠন করেন।
সেখান থেকে বাৎসরিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল এক বছর পর তিনি দরিদ্র ও বয়স্কদের জন্য ভাতা দিতে শুরু করলেন।
উদবা ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন আমার পরে যদি কেউ নবি হতেন তবে সে হত ওমার।
ওমার রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে তিনি বলেছিলেন সে দুর্ভিক্ষের সময় আর যদি ফোরাতের তীরে একটি কুকুর না খেতে পেয়ে মারা যায় তবে তার জন্য আমি ওমর আল্লাহ কাছে দায়ী থাকব।