বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ কি জানেন? হার্ট অ্যাটাক। বলা হয় বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ মৃত্যুর জন্য হার্ট অ্যাটাক দায়ী। হার্ট অ্যাটাক এর বিষয়ে সব কিছু জানতে এই পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত থাকুন।
হার্ট অ্যাটাক কী
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড প্রতি মিনিটে প্রায় ৭২ বার স্পন্দিত হয় । স্পন্দনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সারা শরীরে পাম্পের মত রক্ত সরবরাহ করে। আর এই রক্ত সঞ্চালন হয়ে থাকে হৃদপিন্ডের দুটি রক্ত নালী দিয়ে যার নাম করোনারি আর্টারি।
আরও পড়ুন: কী খেলে আলসার ভাল হয়। ঘরোয়া প্রতিকার
এই দুটি রক্তনালিতে যদি কোলেস্টেরল বা প্লাক জমে যায়। তখন স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না। এতে হার্টের মাংসপেশি রক্তস্বল্পতায় ভুগে এতে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক হয়।
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষন
বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার ওয়েবসাইটে হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ কিছু লক্ষণ এর কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বুকের ভেতরে চাপ দিয়ে বা তীব্র ব্যথা হওয়া এবং এই ব্যথা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া। অনেকটা এমন মনে হয় যে বুকের ব্যথাটা আপনার দুই বাহুতে নেমে আসছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাম বাহু বেশি আক্রান্ত হয় ।
চোয়াল,মারি, গলা, পিঠ এমনকি পেটে ব্যথা ।
মাথা অনেক হালকা মনে হয় ।
মাথা ঘুরতে থাকে বা ঝিমঝিম লাগে ।
প্রচুর ঘাম হয় ।
পুরোপুরি নিঃশ্বাস নেয়া যায়না।
কাশি হয় ।
বমি বমি ভাব হতে পারে ।
সব মিলিয়ে রোগী অসুস্থ বোধ করেন এবং তার বমি বমি ভাব হতে পারে। আবার অনেকে সময় ভীষণ অস্থির হয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এসব লক্ষণ দেখতে পেলে বিন্দুমাত্র দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ । Symptoms of Dengue Fever
সবচেয়ে ভালো হয় এমবুলেস ডাকলে। হাসপাতালে নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করার সময় রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং মানসিকভাবে আস্বস্ত করতে হবে যেন তার হাটের কোন প্রেসার না পড়ে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
আপনার আশেপাশে যদি বড় কোন হাসপাতাল না থাকে তাহলে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শের সাথে সাথে রোগীকে এসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাইয়ে দিতে হবে অথবা জিহব্বা নিচে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে করতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী
কারো যদি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাহলে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ন । এর মানে হার্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া । যদি দেখেন যে রোগী আর শ্বাস নিচ্ছে না বা নড়াচড়া করছে না বা তাকে বারবার ডাকার পর কোন সাড়া মিলছে না।
তখন সাথে সাথে এম্বুলেন্স খবর দিতে হবে এম্বুলেন্স পৌঁছানোর আগেই রোগীকে সাথে সাথে সিপিএস চেষ্ট কম্প্রেশন দিতে হবে এটি হার্ট কে পুনরায় চালু করে স্টার্ট করে ।
চেষ্ট কম্প্রেশন কীভাবে দিবেন
রোগীকে চেস কম্প্রেশন দেয়ার আগে তাকে চিত করে শুইয়ে নিন । এরপর আপনার হাত থেকে আরেকটি হাত দিয়ে লক করে নিন। এরপর এই অংশটি দিয়ে রোগীর বুকের ঠিক মাঝখানে আপনার শরীরের ভর দিয়ে চাপ দিয়ে এমনভাবে চাপ দেবেন যাতে রোগীর বুকের এই অংশটি ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ডেবে যায় এবং প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বারে এই কম্প্রেশন দিতে হবে ।
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারন কী
ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাইপারলিপিডেমিয়া
বংশে কারো যদি হার্ট অ্যাটাক হয়
ধূমপানের অভ্যাস
স্থুলতা ও মুটিয়ে যাওয়া
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অতিরিক্ত অশান্তি
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করনীয়
জীবন যাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যাবে । এজন্য প্রথমেই মানসিক অবসাদ বা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। শরীরের ওজন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ।
আরও পড়ুন: কিডনির কাজ । কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে । এছাড়া অতিরিক্ত চিনি, লবন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করলেও কিন্তু এই রোগ থেকে আমি অনেক দূরে থাকতে পারবেন।