কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আজকের পোষ্ট । কোরবানি কেবল পশু জবাহ করা নয়, বরং এটি ঈমানের পরিচয়, ত্যাগের প্রতীক এবং বরকতের ঝর্ণা।
প্রতি বছর হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর ত্যাগ ও সমর্পণের স্মরণে মুসলিম উম্মাহ আনন্দের সাথে ঈদুল আযহা উদযাপন করে। এই ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোরবানি।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:
কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করে, তার সকল পাপের ক্ষমা হয়ে যাবে।” (তিরমিযী)
জান্নাতের পথ:
কোরবানি জান্নাতের পথ তৈরি করে। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিটি কোরবানির পশু একটি জান্নাতের পথ তৈরি করে।” (ইবনু মাজাহ)
গুনাহের পর্দা:
কোরবানি গুনাহের পর্দা তৈরি করে। হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোরবানিকারীর জন্য প্রতিটি লোমের বিনিময়ে সাওয়াব আছে।” (তিরমিজী)
সামাজিক দায়িত্ব পালন:
কোরবানির মাধ্যমে গরিব ও অভাবীদের সাহায্য করা হয়। হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা কোরবানি করো এবং তোমাদের অভাবী ভাইদের খাওয়াও।” (ইবনু মাজাহ)
কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস:
১. প্রতিটি লোমের জন্য নেকি:
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
“মানুষের কোন কর্ম আল্লাহর নিকট উযর্ণের দিনে কোরবানির চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। কোরবানির পশু তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ হাযির হবে। আর তার রক্ত যমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কোরবানি করো।” (সহীহ বুখারী)
২. আদম (আঃ)-এর সুন্নত:
জায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
“আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি কী? রাসুল (সাঃ) বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আঃ)-এর সুন্নত। অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান আছে? জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।” (সহীহ বুখারী)
৩. আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় আমল:
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
“আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আদায়কর্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয় কোনটি?’ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘রমজান মাসের রোজা ও আদায়কর্মের দিনে কোরবানি করা।'” (সহীহ বুখারী)
৪. গুনাহের পর্দা:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
“আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘কোরবানিকারীর জন্য প্রতিটি লোমের বিনিময়ে সাওয়াব আছে।'” (তিরমিজী)
৫. জান্নাতের পথ:
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
“প্রতিটি কোরবানির পশু একটি জান্নাতের পথ তৈরি করে।” (ইবনু মাজাহ)
এই হাদিসগুলো থেকে আমরা কোরবানির অপরিসীম ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারি। কোরবানি আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয় আমল এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য অজস্র সওয়াব ও বরকত রয়েছে।
কুরআনে কোরবানির ফজিলত সম্পর্কেও বলা হয়েছে:
“তুমি তাদের মাংস খাও এবং অভাবী ও গরিবদেরও খাওয়াও।” (সূরা হজ্ব: 36)
“আমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের স্মরণ করার জন্য ও আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার জন্য এই পশুদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কুরবানি করার নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা হজ্ব: 34)
কোরবানি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ঈমানের শক্তি, ত্যাগের মহত্ত্ব এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি সচেতনতার প্রতীক।
কোরবানির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, গুনাহের পর্দা তৈরি করতে পারি এবং জান্নাতের পথ লাভ করতে পারি।